কানিজ বিথী
“আমার পোশাক আমার স্বাধীনতা ” এই ভাবনার গভীরে নারীর স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্যবোধ কতোটা জড়িয়ে আছে তা আজ সত্যি ভাবনার বিষয়। গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় আসছে নরসিংদীর একটি রেলস্টেশনে একজন নারী অন্য এক নারী দ্বারা এবং পরবর্তীতে কিছু পুরুষ দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। মেয়েটির পোশাক শালীন ছিলো কি অশালীন ছিলো বা শালীনতার সংজ্ঞাটাই বা কি- সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা বিষয়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, নারী নয় মানুষ হিসেবে এই সমাজ আমার জন্য কতোটা নিরাপদ।
যখন একজন নারীর সামাজিক অবস্থান দূর্বলভাবে প্রকাশ করার জন্য অন্য আরেক নারীকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন স্বভাবতই ভাবতে হয় নারী সত্যিই কি তাহলে নারীর শত্রু ! হিজাব পরিহিতা নারীটি যখন টপস জিন্স পরা তরুণীকে হিংস্রভাবে আক্রমণ করলো, এতে কি দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অপূর্ণতা, হতাশা, হাহাকার ভর করেছিলো তাঁর সমস্ত শরীরে ! নারীর প্রতি নারীর এই বৈরিতা ক্ষমতাবান সমাজ অধিপতি পুরুষেরই তৈরি করা দৃষ্টিভঙ্গীর বহিপ্রকাশ মাত্র।
অতি প্রাচীন পুরুষশাসিত সমাজের হাত ধরে আজও নারীরা নিজেদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে নিজের বলে ভোগ করতে পারে নি। সমাজ তাকে মানুষ নয়, নারী হিসেবেই বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। শৃঙ্খলা আর অনুশাসনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নারী ভুলে যায় নিজস্বতায় সমুজ্জ্বল থাকাটা কতোটা জরুরি।
পুরুষের স্বেচ্ছাচারিতার অলঙ্কার হিসেবে নিজেকে উজার করে দিয়ে নিজেরই মেধা বোধ বুদ্ধিকে নিজ হাতে ধ্বংস করে চলেছি যেন আমরা। সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুঁজে পাওয়া যায়না বেগম রোকেয়ার ব্রতের ঠিকানা। ভোগবাদ, রক্ষণশীল সমাজে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করার বদলে নরম কাদা মাটিতে দেবে যায় নারী।
এ যুগেও নারীকে শুধুমাত্র পোশাকের কারণে লাঞ্ছিত হতে হয় এই লজ্জা আসলে কার? আমার আপনার নাকি পুরো সামাজ ব্যবস্থার ? অথচ আমাদের বাঙালি সমাজ সংস্কৃতিতে নারীর পোশাকের বৈচিত্র্যময়তা সবসময়ই প্রশংসনীয় ছিলো। সময়ের বিবর্তনে পোশাকে ভিন্নতা যেমন এসেছে, তেমনি সভ্যতার অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে নারীকে বাদ দিয়ে সমাজের উন্নয়নের কথা ভাবাই যায় না।
কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং বৈষম্যের বেড়াজালে আবদ্ধ নারীকে এখনো সামান্য পোশাক নিয়ে নিপীড়নের শিকার হতে হয়। কত ঘটা করে আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করি। নারীর প্রতিভা, মেধা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা বিকাশের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সভা, সেমিনারে কথার ফুলঝুরি তুলি। কিন্তু বাস্তবে একজন নারীকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা করার সময় আশেপাশের কেউই সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসি না। নারী হয়ে নারীকে প্রাপ্য সম্মান দিতে শিখি না।
নরসিংদীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে আপনার আমার সাথে ঘটবে না, তার কতটুকু নিশ্চয়তা আছে। আমরা তো হরহামেশাই দেখি হিজাব বা বোরকা পরিহিতা নারীকেও ধর্ষণ বা নির্যাতনের শিকার হতে। আসুন আগে শুদ্ধ মননশীলতার চর্চা করি, সমাজে নিজের গুরুত্ব বুঝি তাহলেই অন্যকে মর্যাদার আসনে বসাতে পারবো। পোশাক দিয়ে নয় মেধা দিয়ে অন্যকে বিচার করতে পারবো।
কানিজ বিথী, শিক্ষক ( ওয়েস্ট ধানমন্ডি হাইস্কুল)
(রোকেয়ানামার মতামত কলামে প্রকাশিত লেখা লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। এজন্য সম্পাদক দায়ী নয়।)
খুব সুন্দর লিখেছেন মেডাম 😍
ধন্যবাদ আম্মু ❤️
দারুন লাগলো তোর অভিব্যক্তি। আসলে এই অবস্থা আগে যেমন ছিল আজো তেমনি আছে৷ শুধু ধরণ ভিন্ন। এই যাহ!
ভালোবাসা নিরন্তর
পড়লাম৷ ভালো লিখেছো৷
অনেক ধন্যবাদ বন্ধু
এই আহবান বর্তমানের প্রেক্ষাপটে অনর্থক মনে হয় আমার। ক্রম লক্ষ্য করলে দেখবে, আস্তে আস্তে উগ্রপন্থা বাড়ছে, অস্বাভাবিক আচরণ বাড়ছে সবদিকেই। কেউ কি চেষ্টা করছে এর কারণগুলো বের করতে? আর করলেও তার যে প্রতিকার বাতলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা শক্তভাবে অনুশীলন তো হয় না।
আমরা এমন যে শক্ত মার না খেলে ঠিক হই না। কাজেই ওই আঙ্গিকে ভাবা হোক। তাহলে হয়তো পরিবর্তন আসকেও আসতে পারে।
তুমি তোমার পারসেপশন অনুযায়ী একটা লিখতে পার কিন্তু।