কুলসুম আক্তার সুমী
ভালোবাসাহীন এক জীবন কাটিয়ে দেওয়া
একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম, বহুদিন আগে।
বারবার মেয়ে শব্দটা ব্যবহার করতে ভালো লাগছেনা;
তার চেয়ে, ওর একটা নাম দেওয়া যাক—
ধরা যাক, ওর নাম ‘সাহারা’।
ভালোবাসা না পেয়ে মনটা ওর তেমনই হয়ে গিয়েছিলো।
সংসার জীবনের শুরুতেই টের পেয়েছিলো—
জানিয়েও ছিলো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে;
কিন্তু, আপাত স্বাচ্ছন্দ্যের দেখা পেলে
মেয়েদের মনের দাম কে দিয়েছে, কবে ?
সাহারা তাই মেনে নিয়েছিলো সব, দমবন্ধ করে।
কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য— সেও তো সরল পথে আসে নি।
লোভ, প্ররোচনা আর বোকামিতে
শিক্ষকতার মহান পেশা ছেড়ে আদম ব্যবসা!
যারা মূল হোতা, সেই সহোদর তারা তিলোত্তমার বাসিন্দা।
গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক।
বড় বড় মানুষের সাথে ওঠাবসা— লাঞ্চ, ডিনার…
সিঙ্গাপুরে ঈদের কেনাকাটা, দুবাইতে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন।
ওরা উঁচুতলার লোক, ধরা ছোঁয়ার বাইরের!
তৃণমূলের সংগ্রাহক যে, লোকে তো তাকেই চিনে।
মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজারে ধ্বস!
কপাল পুড়লো সাহারার।
স্বামীর আত্মগোপন, গণধোলাইয়ের শিকার, ফেরার হওয়া।
শুরু হলো সাহারার জলে ভাসা পদ্ম জীবন!
ও…..
একটা বিশেষ কথা বলা হয় নি—
ভাঙা মন নিয়েও সাহারা বিএ পাশ করেছিলো।
আর ইতিমধ্যে সে দু’সন্তানের জননী।
ঐ দু’কলম বিদ্যাকে সম্বল করে কোমর বেঁধে
সে এবার নতুন সংগ্রামে অবতীর্ণ।
এতোদিন তার সংগ্রাম ছিলো মনের বিরুদ্ধে;
এবার মন-শরীর, সমাজ-সংসার, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান…
কিছু বছর পর অপঘাতে স্বামীর মৃত্যু।
উত্তরাধিকারসূত্রে যা কিছু পাওয়ার কথা—
সবটুকু দিলেও তো ঋণ শোধ হবে না; দেনাদার যে সে একা!
তাই শ্বশুরালয়ের ভিটেমাটি থেকেও সাহারাদের বঞ্চিত করার সব পাঁয়তারা সারা।
গল্পের এখানেই শেষ নয়— —
যেই সাড়ে তিন হাতে সে পেতেছে শয্যা, শেষ শয্যা;
সেটুকুও তার ভাইদের প্রয়োজনের বাইরের নয়!
তাই, সাহারার সন্তানদের মাথায় ঝুলছে মামলার খড়্গ।
সাহারা আলোকবর্তিকা হতে চেয়েছিলো,
আলোর সন্ধান পায় নি।
ভালোবাসতে চেয়েছিলো, ভালোবাসা পায় নি।
সংসারী হতে চেয়েছিলো, সংসারও তার হয় নি।
আজ সে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত!
ভালোবাসার কথা সে অনেক আগেই ভুলে গেছে;
ভাবনা এখন, কবে সন্তানরা বড় হবে,
কবে শেষ হবে তার ভাতের সংগ্রাম!