শারমিনুর নাহার
কাজবিহীন দিন
আজ সারাদিন নিজের সঙ্গে থাকব। একটা ছুটির দিন আমার মতো করে ব্যবহার করতে চাই। এই প্রত্যয় সকালেই করেছি। এখন সকাল ৮.৪৬। যদিও সকাল শুরু হয়েছে ৭.১০ এ। তবু কতগুলো-
- সকালটাকে সকাল হয়নি
- পাখি ডাকেনি
- ফুল ফোটেনি
- কাশ্মিরে কেউ যায়নি
- কাশ্মির নিয়ে আকমল স্যারের বইটা পড়তে হবে।
- কত পড়া যে বাকি। অনেকগুলো নতুন বই একসঙ্গে করে রেখেছি।
- মহান নজরুল মাফ করবেন কাজী নজরুল ইসলাম পড়তে হবে। ক্লাসে পড়ানোর জন্য।
- আচারের অর্ডার দিলাম।
- শুভসকাল বলা মানুষটাকে আজ সকালে দেখেই বিরক্ত লাগল। এবং এই এতক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম সে কেবল সময় খেয়ে নিচ্ছে। কি দরকার অহেতুক অবান্তর বাক্য ব্যয়ে।
- কদিন নিউজপেপার পড়া হয়নি। আজ একটু দেখব কি দুনিয়ার হালচাল।
- শিশুদের বাইরে নিয়ে যেতে হবে।
- র্স্পশ দরকার। একটু হাগ নিদেন পক্ষে।
- সন্ধ্যায় সময় চেয়ে বসে আছে একজন। সেই একজন কে ?
- সময় তো যাকে তাকে বিলিয়ে দেবার জিনিস নয়। যাকে দিচ্ছ নিশ্চিত বুঝে শুনে দাও।
- কিন্তু আমি সব সময় তাই করি। অপ্রয়োজনে অহেতুক।
- আমাকে নিয়ে বসা বড় কঠিন। এই কঠিন ছাড়া সব কঠিনেই সায় আমার।
এতগুলো ভাবলাম!! ক্লান্ত হয়ে গেলাম। আজ নিজের সঙ্গে কথা কয়ে সময় যাপন করতে চাই। তবু এই উষ্ণ পৃথিবীর সুবাতাস প্রত্যাখ্যান করা সহজ নয়। কারো কারো আলিঙ্গনের কাছে মানুষ কত সহজেই বিক্রি হয়ে যায়। ‘জিগোলো’ আমার একা জীবনের পাওয়া। শব্দটা বোধটা। কোন কোন বোধ/ ভাবনা মানুষ যতই জানুক- পরিস্থিতিতে না পড়লে তার উপলব্ধি প্রগাঢ় হয় না। এই উপলব্ধি অতীতের বিশেষ মুহূর্তের শিক্ষা। আজকাল সেই ব্যক্তিটাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করে। সে আমায় ছেড়ে চলে না গেলে জীবনের শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যেত। এখন সবাইকে বলতে ইচ্ছে করে নির্ভরতার মানুষ- আস্থার মানুষ যদি আপনাকে কিক করে সেটাকে ভালোভাবে নেন। এটাই জীবন। কুসুমাস্তীর্ণ কোমল শয্যা নয়। জীবনকে উল্টে পাল্টে না দেখলে সে নিজের বলে ধরা দেয় না। দুঃখ ফেরি করবেন না। আপনার দুঃখ যখন অন্যের কাছে ফেরি করবেন সে সেটার সুযোগ নেবে। তিনি আপনার যতই প্রাণের বন্ধু হোক। আপনাকে কুপোকাত পেলে সেও কুপোকাত হবে। সুযোগ বুঝে দুটা উপদেশ দিলাম। ক্ষমা করবেন।
শোন, পুচুকে ডেকে তোল, না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকে। সারাটা রাত খুব বিরক্ত করেছে।
‘চলো বারান্দায় গিয়ে বসি’ উফ এই ইনবক্সের জ্বালায় ঘুম হারাম। বাবা তোর বারান্দা তুই গিয়ে বস। ওতো রোমান্টিকতা আমার আসে না। আমি নাকি এক ‘বিষ্ময় মানুষ’ যত দেখে তত বিস্ময় ফুরায় না। ফ্যাতাড়– নাকি? ফ্যাতাড়–কে আবিষ্কার করেছি হাওড়া ব্রিজে গিয়ে। খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার যখন কোন চরিত্রের সঙ্গে একাত্ব হয়ে যাই তখন তাকে সেখানেই আনি। ফ্যাতাড়– হাওড়া ব্রিজে কি করছিল? আমি হাওড়া ব্রিজে উঠার পর মনে হল তাই করি। কলকাতা কল্লোলিনী। ছাতিম গাছ। বিশেষ প্রেম।
মা মা মা মা মা মা
এই যে আমি বাবা, উত্তর দিলাম। উঠে এসেছেন দুজনই। মা ঘরে আছে মানে সকালে মাকে পাওয়া গেছে..আনন্দে আত্মহারা। আর মায়ের চোখে জল।
গতরাতের প্রণয়কথা- কথাটা আগে যদিও সে বলেছে, ‘তুমি কবে কার সঙ্গে ভেগে যাচ্ছ’, মানে এই যেমন কাউকে পছন্দ হল। তুমি সিদ্ধান্ত নিলে তার সঙ্গে এখন থাকবে। ওহ্ ; তাহলে ওই মাগীকে তুমি নিয়ে আসবে। আর ওই মাগী আমার শিশুদের তুলোধুনা করবে? [ রাত দেড়টায় এত অবলীলা এবং ঠান্ডা মাথায় মাগী শব্দ ব্যবহার করতে পেরে নিজেই বিস্মিত!! যাক নিজের উন্নতি হয়েছে এই ভেবে রাতটা পার করা যাবে।]
এই গালিটা শিখেছি জীবনের বিশেষ মুহুর্তে। কী অদ্ভুত! মানুষকে পরিস্থিতি সবকিছু শিখিয়ে দেয়।
ঘুম-স্বপ্ন- স্বপ্নের ঘুম
আগারগাঁও কলোনিতে নয়নতারা ফুল কেনো নেই পড়বার পরে সত্যিই আগারগাঁও যেতে মন চেয়েছিল। আমার এক বন্ধু থাকত সেখানে। জন্মই তার ওখানে। বাবার চাকুরি সুত্রে। রেডিওর চাকুরি। তিনিও কবি। সেই বন্ধু একবার কাকডাকা ভোরে না একবার নয় কয়েকবার কাকডাকা ভোরে দেখা করতে এসেছিল। আমিও সঙ্গতি বিধানে ব্যর্থ হয়ে চলেছিলাম। প্রায় ১২টা পর্যন্ত আমরা এ ব্যঞ্চ সে বেঞ্চ করলাম। কি প্রচন্ড ক্ষুধা আমার। রাতে খেয়েছিলাম কিনা মনে নেই। তবে সকালের যে ক্ষুধাটা পায় সেটা। তখনও ভগ্ন স্বাস্থ্য আমি। একটু করে খাই বাঁচি। কোন রিজার্ভ নেই শরীরে। টাকা কিন্তু আমারও আছে তারও আছে। আমরা দুজনেই একই অফিসে চাকরি করি। কিন্তু কি হলো একবারও সে খাবারের কথা বলে না। শেষে যখন অফিসের দিকে হাঁটা দিচ্ছি আমি বললাম, চলুন বরং একটু চা খাই। সকালের চা তো আজ জোটেনি। উনি তখন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে মানে ফুটপাতের একটু চায়ের দোকান থেকে এক কাপ চা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। বলল বিস্কিট নেবেন? না। ..না এসব পঁচা কথা কেনো যে মনে থাকে। যদিও তিনি দীর্ঘদিন আমাতে ডুবে ছিলেন কিন্তু ঘরে এসে বসতে পারলেন না। বারবারই বাইরের মানুষই থেকে গেলেন। ‘আপনি থেকে তুমি আর আমাদের হল না। হলনা কোনদিন হাত ধরা। অথচ আস্ত একটি কাব্য লিখে ফেললেন, আমারই প্রিয় ফুলের নামে। আর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে তা উপহার দিলেন।
হাহা হাহা হিহি। যাকে নিয়ে লেখা কবিতা তাকে বলবার সৎ সাহসও নেই আমাদের কবিদের। তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে নিজেদের প্রবোধ দেয়া ছাড়া কোন সাত্বনা নেই।