ঊর্মি চৌধুরী
দুপুরের তপ্ত রোদে, তকতকে নিকোনো উঠোনে ধান শুকোচ্ছিল মেয়েটি। রোদের ঝলক মুখে লেগে তার সোনাবরণ গায়ের রঙ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।খোলা এলোচুলে অবাধ্য বাতাস দোল খেলছে।কখনও মুখে,কখনও চোখে এসে পড়ছে,তার সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।ধানের মধ্যে ক’টা জালালি কবুতর উড়ে এসেছে এটাও তার অলক্ষ্যে থেকে গেলো। মনটা যেন কোথাও বাধা পড়ে আছে।
“ও বিনু কই গেলি রে,হায় হায় কৈতরে তো সব ধান খাইয়া ফেলাইলো। কই গেলিরে বিনু? ওমা তুই তো দেখি এইখানেই আছিস। তই কৈতর তাড়াস না ক্যান?” এই বলে মা আরও জোরে হাঁক দিল এই যা যা,উইড়া যা।
আইচ্ছা মা তুমি এমন ভাবে কথা বলিছো,কৈতরে কী কথা বুঝে? এই যে ঢিল কুড়ায়ে রাখছি এসব ছুড়লেই পারো,নইলে লাডিটা নেড়ে আওয়াজ করো। এত কথা কন লাগে? এটা বলেই বিনু হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
এত হাসির কী আছে? কথা কইবার আগেই হাসতে থাকোস,পুরা বাড়িডা মাথাই লইয়া হাসোছ। রাস্তার পাশ দিইয়া কত মানুষ যায় তারা কী ভাববো ক দেহি? তোরে যে কই লইয়া যাই আমি! কোন ঘরে যে তোর একটা ব্যবস্থা হইবো আল্লাহই মালুম।
মা তুমি খালি প্যাঁচাল পারো,কথা উঠলেই খালি বিয়ার কথা লইয়া মাথা খাও।আমি কী এত খাই!যে তোমার গোলার ধান শেষ করতাছি, নাকি চক্ষু শূল হইছি।তুমি একবারি আমারে দেইখতে পারো না।
ওই দেহো,মাইয়ার কথা শুনো! মাইয়াগো সময়ে বিয়া দিতে অয়। বয়স বাইড়লে ভালা পাত্র আসে নারে মা। আর তোর বাপের শরীরডাও ভালা না। কখন কী হয়!
তুমি একদম আমার বাপেরে লইয়া কথা কইবা না। আমার বাপের কী এমন বয়েস হইছে। তারে তো বুইড়া বানাইছে তোমার মাইয়ারা। এক একবার আইবো আর লম্বা ফর্দ বানাইবো,এই লাগবো হেই লাগবো। ক্যান তাগো জামাইরা বউয়ের শখ আহ্লাদ পূরণ করতে পারেনা। সব আমার বাপেরে দিতে হইবো ক্যান এখনো। তাগো খরচ কইরা বিয়া দিছে না। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে বিনু জ্বলে উঠে যেন।
এত চিক্কুর পারিস না মাইয়া,আগে বিয়াডা হোক তারপর বুঝবিনে। পরের ঘর কখনও আপন হয় নারে। মাইয়া মাইনষের বুড়া বয়সেও বাপের বাড়ি লাগে।
তয় তোমরা যে কও বিয়ার পর শ্বশুর বাড়ি আপন কইরা নিবি,লাল কাপড়ে ঢুকবি,সাদা কাফনে বাহির হবি। যেই ঘর আমাগো আপন কইরা লয় না সেই ঘরে ক্যান পাঠাও মা!
ওমা,তয় ডিঙ্গি মাইয়া ঘরে রাইখা দিমু নাকি,মাইয়াগো জন্মই হইছে পরের ঘর সুন্দর করার লাইগা।
তোমার মাইয়ারা কী ভালা আছে মা! তুমি তো মা,বুঝো না তাগো চেহারা দেইখা। তারা তিনজনের কেউই তো আগের মতো খিলখিল কইরা হাসে না। একেকজন একেক রকম প্যারাতে। হাইসতে মনেহয় ভুইলা গেছে তারা।
মা একটা দীর্ঘশ্বাস টানে,মুখটা শুকিয়ে আসে। আমগো আর কী করবার আছে ক। যতদূর পারি কইরাই তো চলছি।
করা না করার কথা কই নাই মা,এত দেওনের পরও তাগো শ্বশুরকুলে শান্তি নাই। একটা বইনো আমার মাথাটা উঁচা কইরে কথা কইবার পারে না। আর দেহো,জামাইগুলানও কেমনে চুপচাপ থাইকা সায় দেয় তার মা বাপেরে। ঠিক,বেঠিক কথা কইতেও বুকের সাহস লাগে,এইডা তোমার মাইয়াগো এত বুঝাই শুনে না কেউ। উল্টা আমারেই চুপ থাকতে কয়।
শুনো মা,তোমরাও দোষ করছো। বিয়া দেওনের আগে মাইয়া গো লেখাপড়া শিখাইয়া উপযুক্ত কইরা দিতা,
আইজ এত সমস্যা দেইখতে হইতো না। উচিত কথা কইতে জানলে নিজেগো পরিবার নিজেরাই ঠিক রাইখতে পারতো। তুমিও আড়ালে কাঁদতা না মা,আর আমার বাপেও আফসোসে ডুইবা যাইতো না।
আগে একখান রাজ পুত্তুরের লগে বিয়াডা হোক তারপর বকবক করিস। সব কথাই প্যাঁচাল করিস।
বিয়া আমি রাজপুত্তুরকেই করুম,শুধু কলেজ পাসডা কইরতে দাও। তারপর আমার পড়ালেখা ঠেকাই কে? তোমার ঐ চাচা মানে,ঘটক বেডা,(নানারে) আমগো বাড়িতে আইতে নিষেধ করবা খালি। বিনুর মুখে একটা অমৃত হাসির রেখা,কী যেন ভাবছে চোখগুলি। মা তাকিয়ে থাকে তার মুখের দিকে,বিনু টের পায় না।
এমন সময়ই খলিল মিয়া বাহির থেকে উঠোনে প্রবেশ করে,দোকানটা বন্ধ করে দুপুরে খেতে আসে,তারপর ঘণ্টাখানেক ভাতঘুম দিয়ে আবারও দোকানে গিয়ে বসে। দোকানটাই তার একমাত্র আয়ের উৎস। মাশাআল্লাহ বেচা-বিক্রিও ভালো। এই একটা দোকানের কামাই দিয়াই ঘর সংসার চলে,তিন মেয়ের বিয়ে দিলো।আর কী!
এই মাইয়ার পড়বার বহুত ইচ্ছা,তসই স্কুল পার হইয়া কলেজে ভর্তি হইলো। স্কুলের মাস্টার সাহেবরাও এত কইরা বললো,দেখি কতদূর টাইনা লইতে পারি। বড় তিনডা তো স্কুলের গণ্ডি পার হবার আগেই পরের ঘরে পাঠাই দিছি। আছে ভালাই,যে যার ভাইগ্য লইয়া জন্মাইছে,আমি তো কেবল চেষ্টা কইরতে পারি।
কী কথা হইচ্ছে মা মেয়েতে? ও বিনু তোর মা আবার কী লইয়া তোর মাথা খায় বলে একটা ঝরঝরে হাসি দিলো।
আমিই তোমার মেয়ের মাথা খাই না তোমরা বাপ বেটি আমার মাথাটা চিবাইয়া খাও? মা চেঁচিয়ে উঠে।
যাও, তোমার মাইয়া নাকি রাজপুত্তুর ছাড়া বিয়া করবো না,এইবার খোঁজো তবে।
তাই বলছে নাকি! বইললে ঐটাই হইবো। একডা ছোডো মাইয়া আমার,একখান রাজপুত্তুর খুঁইজতে পারুম না! এইডা কেমনে হয়?
বাবা এখনই না কইলাম,আমি আগে পড়ালেখাটা শেষ করি তারপর খুঁইজবা।
বিনু বিছানায় বসে খিড়কীর দুয়ারটা মেলে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে, পুকুরে তক্তার ঘাটের দিকে। কাইলকে শেষ বিকেলের কথা মনে হতেই আরও উদাসী হয়ে পড়ে।
গতকাইল শেষ বিকেলে ধানক্ষেতের আইল ধরে লতারে নিয়া যখন বাড়ি ফিরছিলো তখনি মাস্টার চাচার পোলা তপুর সাথে দেখা,সাথে আরও দুই বন্ধু। মনেহয় ছুটিতে বেড়াইতে আইছে। কেমন সাহেব সাহেব লাগে। গেলো দুই বছর হইলো শহরে ভার্সিটিতে পড়তে গেছে। আগে কলেজে পড়ার সময় মাঝে মধ্যে তারে অংক বুঝাইতে আইতো। বিনুর অংকের চাইতে তার মন বুঝতেই ভালা লাগতো। সেইও বুঝতো তয় কিছু কইতো না।
আইজকেও দেইখলো কিন্তু বন্ধুূদের লগে আছে তাই কথাই কইলো না। ভারী দেমাগ অইছে দেখি। আমিও কম কীসে! পাসডা আগে দিই,তারপর দেখুম নে।ত য়,বন্ধুগুলানের চাওনি ভালা না,কেমনে জানি দেইখে।
কলেজ পাস দিয়া যখন তপু ভাই ঢাকায় চলে যাবে শুনছিলো বিনুর খুব মন খারাপ হইছিলো,আর দেইখা হইবোনা,অংক বুঝাইতে আসবোনা প্রত্যেকদিন এইজন্যে। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে জোরে হাসলে,লতা,মৌরির সাথে গল্পে গল্পে রাস্তার মাঝ দিয়া হাঁটলে কেউ আইসা বকবো না,কেউ হেসে অংকের কঠিন সূত্রগুলো সহজ কইরে দিবেনা। এত ভালা পাস দিছে,শহরে তো যাইবোই,তারে আরও কত্ত উপরে উঠতে হইবো।সেই যে এই গ্রামের গর্ব। তবে যাবার আগে তার এক বন্ধুকে ঠিক কইরা গেলেন মাস্টার হিসেবে। বিনু ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন ভোরবেলা সালাম দিয়ে চাচী কেমন আছেন জিজ্ঞেস কইরতেই বিনু ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়। এই কণ্ঠ যে তার বড্ড চেনা। মা কুশলাদি জেনে বিনুরে ডাক দেয়,বিনু তপু বাপজান আইছে। ঘরে লইয়া যা। আমি নাস্তা দিতেছি।
যাও বাপ,ওরে একটু বুঝাও,পড়া লেখার সাথে সাথে সুন্দর চলাটাও তো শিখতে অয়। আওয়াজ করে হাসে,ও বাড়ির লতারে নিয়ে বিলে বাগানে ঘুরে। মাইনষে খারাপ কয়। বিয়া দিতে অইবো না। ওতো এইডা বুঝেনা। তোমরা শিক্ষিত মানুষ,ওর বড় ভাইর মতো। কইলে যদি শুনে মাইয়াডা। তোমার চাচাও বেশি আদরে মাথায় তুলছে।
মা,আবার তুমি বিয়া নিয়া লাগছো? বিনুর রাগ লাগে খুব। এমনিতেই সাহেব কাইলকে পাত্তা দিলো না। আমিও ভার্সিটি পরুম।তখন দেখবোনে।
তপু ঘরে ঢুকেই সোজা পড়ার টেবিলে যায়,চেয়ার টেনে বসে পড়াশুনার খবর নিতে থাকে।
সামনে পরীক্ষা,এখন এত ঘুরাঘুরি করলে পাস করবা কেমনে? কেমনে কলেজে ভর্তি হইবা?
বিনু অভিমানী কণ্ঠে বলতে থাকে, “আমি পাশ করুম,আর ভালা ভাবেই পাশ করুম। তারপর শহরে গিইয়া ভার্সিটি যাইমু।দেখি কে আমার লগে কথা না কয়?”
শহরের কথা শুনে তপুর মুখটা ধূসর মেঘে ঢেকে গেলো,কী যেন আড়াল করতে চাইলো। বিনু কী মনে করলো ও নিজেই বুঝতে পারে না। শুনো,কাইলকে বাইরের মাইনষের সামনে কথা বলা কি ঠিক হইতো। আমি অন্তঃত তা মনে করি না।
কেমনে বলি বিনু,আমি তোমারে অপরিচিত কারো সামনে পইড়তে দিতে পারি না,কার মনে কী খেলে। এত বড় ঢাকা শহরে ভালার স্বাদ পাইলেই ভালা সব। আর একবার আঁধার গলিতে ঢুকে গেলে বাইরে যাবার পথ পাবে না। যেমনটি আমি হারায়ে গেলাম।
বিনু ধূর্ত মাইয়া,চোখ দেইখা আন্দাজ করতে পারে অনেক কিছুই। যতই রাগ ঢালুক বোনদের না বলা দুঃখের কথাগুলো সেই ই বের করে,বাপরে দিয়ে সমাধান করে। কী হইছে আপনের তপু ভাই? মুখে হাসেন কিন্তু মনটা এত অশান্ত ক্যান?
বিনু,তোমার সাথে অনেক কথা আমার। আজকেই হয়তো শেষ দেখা,শেষ কথা।তাই ওদের ঘুমে রাইখা এত ভোরে আইলাম।
ক্যান কী হইছে ?
বিনু,ঢাকা গেছিলাম পড়তে,মা বাপের স্বপ্ন পূরণ কইরতে। কেমনে কী হইয়া গেলো! আমি পড়ার টাকার খোঁজ কইরতে গিয়েই পড়ছি খারাপ মাইনষের হাতে। এত খারাপ,এক্কেবারে চোরা কারবারির হাতে। ওরা মাদক পাচার করে। হেরোইন, ইয়াবা সহ যতরকম মাদক আছে,সোনার বারও পাচার করে। সহজ সরল পোলা গো ধইরা এক জায়গা থেইকা অন্য জায়গায় পাঠায়। যারা পাচার করে তারা জানেও না ভেতরে কী আছে? জায়গা মতো পাঠাইতে পাইরলে মেলা টেকা,আমিও প্রথম থেইকা সেই লোভে পড়ি। টেকার পর টেকা আসতে থাকে হাতে। মেস ছাইড়া ভালো বাসা লই,নিজের ভবিষ্যৎ দেখি চকচকে আয়নাতে।
বাবারে কই টিউশন করি,পড়ালেখাও ভালাই চলে। কিন্তু না,কখন যে আয়না ভেঙে চুরমার হইয়া গেছে,সব ছাইড়া আমি দূরে মাঝ দরিয়ায় ভাসতে থাহি বুঝিনি।
বিনু পাশের আলমারিতে হেলান দিয়ে দাড়ায়, চোখগুলো ছানাবড়া,মুখে কোনো কথা নাই।
তপুর ঠোঁট কাঁপে। বিনু আমি অহন ফেরারী আসামী,পুলিশ খুঁজতাছে আমাদের তিনজনকে,চোরা কারবারিরাও খুঁজছে। গা ঢাকা দিতেই এই গ্রাম,সেই গ্রাম ঘুরে বেড়াই। পুলিশরে ধরা দিলে সাজা হইবো,যাবোজ্জীবন,মাইনা লইতে দোষ নাই। কিন্তু তার আগেই ওদের হাতে ধরা পইরলে তো ফায়ার কইরা মাইরা ফেলবো। বিশ্বাস যাও,মূল হোতাদের আমরা তো চিনি না,দেখিনাই কোনোদিন। আমরা তিনজনই একই হলে উঠছিলাম,চোখে একগাদা রঙিন স্বপ্ন লইয়া।সব শেষ বিনু।
বিনুর চোখে একটাই প্রশ্ন,এইডা তুমি কী করলা তপু ভাই? আমি যে তোমারে লইয়া স্বপ্ন দেইখতে শুরু করছি। তুমিই আমার স্বপ্নের রাজপুত্তুর,বড় পাস দিয়া ফিরে,বর সাইজা এসে নিয়ে যাইবা আমারে। ততদিনে আমিও নিজেরে তোমার যোগ্য কইরা তুলুম। দুইজন মিইল্যা স্বপ্নগুলান পুরা করমু। অহন আমি কেমনে আগামু সামনে,কে আমারে পথ দেখাইয়া দিবো।
আমি যাই বিনু। সন্ধ্যেবেলা আবার নাম না জানা জায়গার উদ্দেশ্যে বের হইতে হইবো। জানি না কোথায় গিয়া ঠাঁই হইবো।তুমি শুধু সাবধানে পা ফেলবা,খুব সাবধানে। মানুষ চিনতে কষ্ট, কিন্তু চোখ কান খোলা রাইখা চললে অসম্ভব না। আমি ভুল করছি,তুমি করবানা এই ভুল। আমি চাই তুমি লেখাপড়াডা শেষ করো,বড় মানুষ হও। আর,আর আমারে মাফ কইরা দিও।
দুপুরে তপুূদের যে ঘরে তপু থাকে সেইখানে কড়া নাড়ে কেউ। তপুর মা,মাস্টার চাচা পুলিশ দেখে অবাক চাইয়া রয়। কারো মুখে কোনো কথা নাই। তপু দরজা খুলে চোখে অন্ধকার দেখে। বাকি দুইজন তখনও নেশার ঘোরে চোখ বন্ধ করে থাকে।পুলিশ যখন হাতকড়া পড়িয়ে তিনজনকে উঠোন পার করে তপুর মা মূর্ছা যায়। মাস্টার চাচা বোবার মতো দেইখা থাকে,যেন এদের কাউরে তিনি চিনেন না। তারপর তিনজনকে রাস্তায় নামিয়ে গাড়ীর দিকে হাঁটে পুলিশ।
দুপাশে উৎসুক মানুষের ভীড় লেগে যায়। এত ভালা পোলাডা কী অপরাধ কইরতে পারে,কোনোদিন কারো চোখের দিকে তাকিয়ে বড় কথা কয় নাই,যার যখন দরকার ঝাঁপাইয়া পড়তো। মাইনষে কইতো,মাস্টার সাহেবের পোলা তার মতই ভালা মানুষ হইছে। তখনও ভীড়ের মইধ্যে তপুর দুচোখ যেন কাকে খুঁজে।
গাড়ীর পাশে বড় গাছটার আড়াল থেকে বের হয়ে বিনু বলে,যাও তপু ভাই।দেখা হইবো একদিন। আপাতত ওদের মার্ডার থেইকা বাঁচালাম। সাজা যাই হোক,একদিন তোমারে হাজত থেইকাও বাহির কইরা আনুম। আর একজন সারাজীবন তোমার অপেক্ষায় থাকবো কইলাম,আমার হৃদয়ে চোরাকাটা বিঁধেছে যে!
তারপর ঘড়ির কাঁটা ঘুরে,একে একে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টায়,প্রতিবছর সাল গণনার শেষের সংখ্যাটা পাল্টাতে থাকে….
বিনু দেখে,তিনজন মাঝ বয়েসী লোক বের হইয়া আসতাছে। চুলগুলো আধপাকা,না বেশ খানিকটা পাকা। কতদিন আয়না দেখিনা,আমার কপালের চুলগুলোও তো সাদা হয়েছে নিশ্চয়। চশমাটা ঠিক করে নেয় বিনু। দেখে,ধীরপায়ে তারদিকে এগিয়ে আসছে সেই চেনামুখটা।একটা ভরসার চাহনি তার চোখে মুখে।
গায়ের কালো কোটটার দিকে তাকিয়ে বিনু ভাবছে, সময় কতটা দ্রুত বয়ে যায়,এই ক’ ঘণ্টাতেই হেঁটে আসলো প্রায় পনেরো বছরের পথ।