0

পাল্টে যাওয়া জীবন: সার্জারির আগে ও পরে

Share

জাহান-ই-গুলশান

গত দুই বছর আগে আমি ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হই। এর আগের জীবনটা ছিল আমার একেবারেই অন্যরকম। আমি ঘুণাক্ষরেও কখনো ভাবিনি আমার শরীরে এমন রোগ বাসা বাঁধতে পারে। যে রোগটির কারণে অধিকাংশ মানুষকেই হেরে যেতে হয় মৃত্যুর কাছে। অদম্য মানসিক শক্তি, সময়মতো চিকিৎসা, সার্বক্ষণিক ডাক্তারের পর্যবেক্ষণ এবং সকলের সহযোগিতা থাকায় আজ আমি অনেকটাই ক্যান্সারকে জয় করার পথে। আমি চাই  ওভারিয়ান ক্যান্সার নিয়ে যেন নারীদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হয়। সে উদ্দ্যেশেই আমার ক্যান্সারে আক্রান্ত, চিকিৎসা এবং এর পরের বিষয়গুলো রোকেয়ানামার পাঠকদের সাথে শেয়ার করব ধারবাহিকভাবে। আমার অভিজ্ঞতা যদি কারো প্রয়োজনে আসে তাই এই ছোট্ট প্রয়াস।  

একটা সার্জারির পর জীবন  আমার অন্য মাত্রা পেল মানে আমার জীবনটা বদলে গেল। হ্যাঁ, এভাবে বলাই যায়। সার্জারির আগে ও পরের জীবন একেবারেই আলাদা। সবদিক দিয়েই। সময়টা  ৭ নভেম্বর ২০২০ সালের। সেদিন আসলে কি হয়েছিল চলেন আমার পরিবারের এক সদস্যের ফেসবুক পোস্ট থেকেই জেনে নেয়া যাক। 

“জাহান-ই-গুলশানের প্রায় সাড়ে তিনঘন্টা ব্যাপী অপারেশনটি ছিল খুব জটিল। ছয় ইঞ্চি আকারের দুটো ওভারিয়ান সিস্ট, বাল্কি ইউট্রাসে  বড় মায়োমা চাপ তৈরি করেছিল মূত্রথলি আর কোলনে। এ কারণে কিডনি স্ফীত হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের এন্ডোমেট্রিওসিস পেলভিক অর্গানগুলো মেরুদণ্ডের সাথেও জোড়া লেগে জমাট বেঁধে ছিল।

সার্জারির পর হাসপাতালের দিনগুলোতে

ডাক্তার  ওটি থেকে বেরিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে যাওয়ার সময় বললেন, “অসম্ভব কষ্ট হয়েছে, সবকিছু এমন জড়াজড়ি করে ছিল, শক্ত শক্ত জিনিস, তবে কিছু ছিঁড়ে যায়নি শেষ পর্যন্ত। শাপলা তখনও ওটিতে। সিনিয়র সার্জন ডাক্তার বিধান অপারেশন ক্লোজ করছিলেন। তিনি যখন বের হলেন জানালেন, কাজটা তুলতে পারবেন কিনা সেটাই দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল, তবে এ পর্যন্ত যা হয়েছে ভাল”। 

সার্জারি টিমের আরেকজন ডাক্তার বললেন, “রোগের জটিলতার কারণে  সময় অনেক বেশি লেগেছে, সাধারণত হিস্টেরেকটমিতে এতটা লাগেনা, যেখানে দুটো সুতোতে হয়, সেখানে লেগেছে সাতটা! ইনজেকটেবল এন্টিবায়োটিকও বেশিদিন দিতে হবে”। শাপলাকে পোস্ট অপারেটিভ থেকে কেবিনে দেয়া হলো।”

এই পোস্টটি আমি একবছর পর ফেসবুক মেমোরিতে পেয়েছি। একবছর পর ও যেন এই পোস্ট আমাকে ওটিতে যাবার কয়েক মিনিট আগের ছেঁড়া ছেঁড়া দৃশ্যগুলো আবার নতুন করে দেখাল। অআমার মায়ের চোখের পানি, বাবার থমথমে উৎকন্ঠা, পরিবার-বন্ধুদের চাপা চাপা দুশ্চিন্তা- এসবই স্পষ্ট অনুভব করতে লাগলাম।  ওটিতে যাওয়ার আগেও জানতাম খুব সাধারণ একটা সার্জারি। মনে আছে খুব, অআমি একটুও ভয় পাইনি। তবে কেমন যেন একটা সূক্ষ অস্বস্তি ভর করেছিল। এটুকু অস্বস্তি নিয়েই ওটিতে ঢুকেছিলাম। পরের কথা তো আমার পরিবারের সদস্যের লেখাতেই বুঝতে পেরেছেন। 

ছবি সূত্র : ইন্টারনেট

সার্জারির পরে বায়োপসি রিপোর্টে আমার ওভারিয়ান ক্যান্সার সনাক্ত হয়। তবে আমাকে জানানো হয়নি। ১৯ দিন হাসপাতালে থেকে বাসায় ফিরি। হাসপাতালে আমি  খুব অসুস্থ ছিলাম। বাসায় ফিরে অনেক চাপাচাপির পর এক ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারি আমার ক্যান্সারের কথা। মনোবল যতটুকু সম্ভব শক্ত রাখার চেষ্টা করি। আমি ভাবতে থাকি, এর সাথে লড়াই করে আমাকে জিততেই হবে। সেই দিনটির পর শুরু হলো আমার নতুন করে পথচলা। ধারাবাহিকভাবে সেই দুর্গম পথ পাড়ি দেয়ার সকল কথাই জানাব আপনাদের। ভাল থাকবেন সবাই..কথা হবে অন্যদিন।

জাহান-ই- গুলশান, ক্যান্সার সারভাইভার