0

প্রথম দশ মাসেই ‘ফলের ঝুড়ি’ ব্যাপক সাড়া পেয়েছে 

Share

তাহসিন বারি সুহা

অনেকেই বলে থাকেন শখ থেকে বিজনেস হয়না। কিন্তু আমার স্টার্টআপ এর শুরুটা অনেকটা শখের বশেই। কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের সময় স্কুল, প্রাইভেট পড়া সব বন্ধ  হয়ে যায়। আমি তখন ক্লাস টেনে পড়তাম।  টিভি দেখে আর মোবাইলে গেমস খেলেই আমার সময় কাটতো। এ সময় ‘উইমেন এন্ড ই-কমার্স’  (উই) ফোরামের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করি। কেনাকাটা করতাম সেখান থেকে। সবার পোস্ট পড়তে  বেশ ভাল লাগতো। এভাবেই একদিন আমারও অনলাইন বিজনেসের প্রতি আগ্রহ জাগে। একটু ভেবে দেখলাম আমাদের তো সব রকমের ফল গাছই আছে। আমাদের বাড়ি নাটোরে আব্বুর আম- মাল্টা -পেয়ারা- ড্রাগন -লেবুর ২৫ একরের একটি প্রজেক্ট আছে। তাহলে তো আমিও ফলমুল নিয়ে অনলাইনে বিজনেস করার চেষ্টা করতেই পারি! 

আমার আইডিয়াটা  আব্বু-আম্মুর সাথে শেয়ার করলাম। তারাও খুশি মনেই মেনে নিলেন। তারপর  ‘উই’ গ্রুপে পোস্ট করা শুরু করলাম। পোস্ট করার পর থেকে একটা দুটা করে ছোট ছোট অর্ডার আসতে শুরু করলো। এভাবে ধীরে ধীরে আমার পণ্যের সুনাম ও পরিচিতি বাড়তে থাকে । যারা প্রোডাক্ট কেনেন তারা রিভিউ দিতে থাকেন। সবাই খুব ভাল ভাল রিভিউ দিতেন আর আমারও ব্যবসার পরিধি এগিয়ে যেতে থাকে। তারপর আরো একটু প্রফেশনালি শুরু করার চিন্তা করি। একটা পেজ খুলি ‘ফলের ঝুড়ি’ নামে। ছয় মাসের মধ্যেই লক্ষ করি বেশ কিছু রিপিট কাস্টমার তৈরি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে এবং বিজনেসও ভালভাবে এগুচ্ছে। দশ মাসের মধ্যেই আমার অনলাইন ভিত্তিক এ ব্যবসাটি ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। 

‘ফলের ঝুড়ি’ ক্রেতাদের কাছে একটা আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা অর্জন করতে পেরেছে ইতিমধ্যেই। আমি সবসময় ক্রেতাদের সবচাইতে ভালো টা ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করি। যে কারণে ক্রেতারাও আস্থা রাখতে পারছেন। অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অতিরিক্ত লাভের আশায় নয় বরং ক্রেতার কাছে যাতে খাদ্যদ্রব্যের মানটাও  ধরে রাখতে পারি সে ব্যাপারে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

 ফলের বিজনেসের পাশাপাশি ‘রেডি টু কুক’  মাছ, মাংস নিয়েও কাজ শুরু করি একসময়। এক্ষেত্রেও ব্যাপক সাড়া পাই। আইটেমও বেড়েছে অনেক। দিনে দিনে আমার ব্যবসায় কর্মীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। গ্রামের কিছু মেয়েরা মাছ, মাংস প্রসেস করে, টুকরো করে রেডি করে দেয়। আমার ব্যবসার পাশাপাশি  গ্রামের অনেক মেয়েরও আয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এর  মাধ্যমে। আমার বর্তমান স্টাফ আছে চারজন। এছাড়াও ডেইলি বেসিসে কিছু লোকও আছে। 

এছাড়াও কাঠের ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল, বিভিন্ন রকমের সবজি, মধু, আখ ও খেজুরের রস, মসলা সহ আরো বেশ কিছু খাদ্যপণ্য আছে। বলতে গেলে মোটামুটি সব ধরণের খাদ্যপণ্যই এখন পাওয়া যাচ্ছে ‘সুহার ঝুড়ি’তে। শুরুতে ফল দিয়ে শুরু করেছি বলে পেইজের নাম দিয়েছিলাম ‘ফলের ঝুড়ি’। তবে আমার নিজের একটি গ্রুপ আছে ‘সুহার ঝুড়ি’ নামে। সম্প্রতি নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছি ‘সুহাসিনী’ নামে। যেখানে পোশাকের কালেকশন রেখেছি। এই উদ্যোগটা অবশ্য আমার একার নয়। আমরা কয়েকজন পার্টনারশিপের মাধ্যমে  করছি এটা। সামনে ‘সুহাসিনী’ আউটলেট উদ্বোধন করা হবে  ইনশাল্লাহ।

আমার এসব কাজের পেছনে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন  মা। আমার মা ও একজন সফল মাছ চাষী। তাই যখন শুরু করতে চেয়েছি তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। এছাড়া মাকে দেখেও শিখেছি অনেক কিছু। অনেকে মনে করেন ফেসবুক কেবল মজা করার জায়গা। আমিও একসময় তাই ভাবতাম। কিন্তু ব্যবসা শুরুর পর থেকে আমার এ ধারণা পাল্টে গেছে। আসলে সব জিনিসেরই একটা ভাল-মন্দ দিক আছে। বিষয় হচ্ছে আপনি এটা কিভাবে নিচ্ছেন। ফেসবুকের মাধ্যমে কেউ যেমন নিজেকে ধ্বংস করে দিতে পারে তেমনই আবার কেউ পৌঁছে যেতে পারে সাফল্যের শিখরে। দরকার শুধু নিজের সূক্ষ চিন্তা বুদ্ধির। 

এছাড়াও আমার এই সফলতার পেছনে রয়েছে উই গ্রুপের বড় একটি ভূমিকা। উই’য়ের মাধ্যমেই আমি ব্যবসা শিখেছি। উই আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা সহজ করে দিয়েছে। এই জায়গাটি মেয়েদের জন্য অনেক নিরাপদ। এখানেই আমি শিখেছি কিভাবে ফেসবুকের  যথাযথ ব্যবহার করতে হয়। এ কারণেই নাটোরের ছোট এই আমি   অনেক অল্প বয়সেই একজন সফল উদ্যোক্তা। আমি যখন ব্যবসা শুরু করেছিলাম তখন ক্লাস টেনে পড়তাম। এখন উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ছি। এই সময়ের মধ্যই আমার বিক্রি হয়েছে ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকার খাদ্যপণ্য।

তবে একজন উদ্যোক্তাকে সফল হতে হলে আরো কিছু বিষয় তার মধ্যে থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত তাকে সময়, পরিস্থিতি, সামাজিক অবস্থা এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। যে কোন কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার মানসিকতাও থাকতে হবে। এছাড়াও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, সততা ও দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারেও থাকতে হবে সচেতন। এ বিষয়গুলো একজন উদ্যোক্তার সফলতার চাবিকাঠি বলে আমি মনে করি। 

 ভবিষ্যতে আমি ব্যবসার পাশাপাশি পড়াশোনাটা ভালভাবে চালিয়ে যেতে চাই। পড়াশোনা শেষ করে  বিসিএস দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার খুব ইচ্ছে আমার। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

তাহসিন বারি সুহা, উদ্যোক্তা (নাটোর)