0

স্মৃতির জানালা খুলে

Share

আইরিন রহমান

২০১৮ সালের  ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের কিছু স্মৃতি মনে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে আমাদের দশজনের বহনকারী গাড়িটি হোটেলের সামনে থামতেই চোখে পড়ল অসংখ্য সিঁড়ির সারি বেষ্টিত লবিটি। রিসিপশনের ললনাকে প্রশ্ন করতেই জবাব দিলেন  “এটা ভুমিকম্প প্রবণ এলাকা আর বিচের সবচেয়ে কাছে বলেই নকশাটি এমন করে করা হয়েছে।” এমন ভাব করলাম যেন সব বুঝে নিয়েছি ! ওয়াশরুমে ঢুকে মুখে পানি দিতে গিয়ে আয়নায় চোখ পড়তেই  দেখি আয়না কাঁপছে। ভাবলাম জার্নির ক্লান্তির কারণেই হয়ত এমনটা মনে হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যেই দেখি সবকিছু দুলছে!  জোরেশোরেই বললাম “এই শুনছ?  আমার কেমন যেন লাগছে।” পতিদেব সহজ সুলভ কন্ঠে উত্তর দিলো “তোমার কিছু হয়নি এখানে ভুমিকম্প  হচ্ছে।” বুঝুন তাহলে অবস্থা ! অনেক উৎকন্ঠা ও ইন্দোনেশিয়া ঘুরে দেখার এডভেঞ্চার মাথায় নিয়ে সে রাতটা পার করলাম। 

পরের দিন পুরো শহর ঘুরে দেখব। সে উদ্দেশ্যেই একখানা গাড়ি সহযোগে সকলেই বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমেই বেশকিছু মন্দির ও প্যাগোডা দেখলাম । এতো সুন্দর কারুকাজ বেষ্টিত স্থাপনা ! সত্যিই মনে রাখার মতো। এরপর ঝুলন্ত ব্রিজ , ঘুমন্ত অগ্নেয়গিরি ও রাইস ট্যারেস। সবমিলিয়ে সবুজে ঘেরা সুন্দর পরিবেশে মনটা সতেজ হয়ে উঠলেও কমবেশি সকলেই তখন ক্ষুধার্ত। পাশেই একটা বড় রেস্তোরাঁয় আহারের উদ্দেশ্যে সকলেই বসে পড়লাম। কিন্তু সতেজ মন নিমিষেই যেন চুপসে গেলো , এতো খাবারের ভিড়ে কি খাবো বা কি খাওয়া উচিত কেউই বুঝে উঠতে পারছিলাম না । স্কুইড ভাজা থেকে নারিকেল স্যুপে শামুক ও পাস্তার সাথে পর্ক  ইত্যাদি। খাবারের টেবিলে আমাদের  একজন ওয়েটারকে উদ্দেশ্য  করে বলে উঠলো “স্ম্যাশ পটেটো উইথ রাইস হবে কি?”  আমরা সকলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম । জানি না রেস্তোরাঁর অন্য সবাই কি ভেবেছিল সেদিন!

পরদিন সকালে বালি বিচে হাঁটতে গিয়েই পা কেটেছি। খেয়াল করলাম এটা বালির বিচ নয়। নুড়ি,ঝিনুক,পাথরে ভরা! কষ্টের মাঝে মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সত্যটি বেরিয়ে এলো ” উফ্ এটা কোন বিচ হলো?  এর থেকে হাজারগুণ ভালো আমার কক্সবাজার।” পাশে কারোরই কথাটা পছন্দ হলো না। 

দূর থেকে দেখি একজন তরুণী কাঠগোলাপের মালা, তাজ ,বাজু পরে হাসিমুখে একটা ডাব নিয়ে এগিয়ে এলো আমার দিকে  আর আমার কানে গুঁজে দিল একটি ফুল। দারুণ অনুভূতির মাঝেই বিপত্তিরও কমতি নেই! ডাবের পানি মুখে দিতেই আবারো আরেকটা সত্য বেরিয়ে এলো মুখ ফসকে “ইস্ এটা কোন ডাব হলো? এরচেয়ে বরিশাল বা নোয়াখালীর ডাব কত ভালো।” এইবার তাকিয়ে দেখি  পতিদেব মহাবিব্রত! 

বললাম ইয়ে মানে সবই ঠিক আছে, তবে কেমন নোনা নোনা…. হা হা….!!!