এপি তালুকদার
(ভ্রমণকে তিনি তুলনা করেন ভ্রমরের সাথে। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছেন, ‘ভ্রমণে জ্ঞান বাড়ে।’ সেই জায়গা থেকেই হয়তো ভ্রমণের প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি হয়েছিল সেই ছোটবেলাতেই। তবে ছোটবেলায় ইচ্ছা পূরণ না হলেও এখন তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ ও দেশের বাইরের নানা প্রান্তে। বেশিরভাগ সময়েই তাঁর ভ্রমণের সঙ্গী হচ্ছে সাইকেল। ‘অভিযাত্রী’ নামে তাঁদের ভ্রমণের একটি দল থাকলেও সম্প্রতি তিনি একাই ঘুরে এসেছেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। ‘একলা ভ্রমণের গল্পকথা’- শিরোনামে তাঁর ১৪ দিনের ভ্রমণ কাহিনি শেয়ার করেছেন রোকেয়ানামার সাথে। ধারাবাহিকভাবে তাঁর এই ‘একা ভ্রমণের গল্প’ প্রকাশিত হবে রোকেয়ানামায়।)
গেলো ১৫ জুলাই রাত ১১ টা বেজে ৩০ মিনিটে মাজার রোড থেকে দর্শনার বাস। দুপুরের মধ্যেই ব্যাগ গোছানো শেষ। মনের মধ্যে কেমন যেন করছিলো! গুরুকে ( সোহাগ বিশ্বাস) একটু পর পরেই কল করছি আর মেসেজ করছি। আমার অনেক কিছু করার পেছনে সোহাগ দাদার অনুপ্রেরণা রয়েছে তাই তাঁকে আমি গুরু বলেই ডাকি। তিনি বরাবরের মতোই সাহস দিয়েছেন, মোটিভেট করেছেন। সব শঙ্কা এবং কেমন লাগা কাটিয়ে উঠে রাত ৮:৪৫ মিনিটে আমি আর আমাকে বাসে তুলে দিতে সোহেল ভাই (‘অভিযাত্রী’ দলের ভলান্টিয়ার) মাজার রোডের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। দলের আরেকজন ইমাম ভাইয়ের আসার কথা থাকলেও শরীর খারাপ থাকার কারণে তিনি আসতে পারেননি। মুরাদ ভাইয়া ধানমন্ডি থেকে রওনা দিয়েছেন। ফার্মগেট এসে আজিজ বসকে মেসেজ করলাম, আমার যাওয়ার কথা শুনে ভাইয়া আসতে চাইলেন। দিদার ভাইকে ফোন করলাম, ভাইয়াও আসতে চাইলেন। এদিকে বাকি সবার আসার কথা শুনে সোহেল ভাই আসাদ গেটের কিছুটা সামনে নেমে গেলেন, কেননা ভাইয়ার বাসায় যাওয়ার তাড়া ছিলো।
অবশেষে ১০ টা বেজে ২০ মিনিটে কাউন্টারের কাছাকাছি পৌঁছেই মুরাদ ভাইয়ার ডাক শুনতে পেলাম। আড্ডা জমলো বেশ খানেকটা সময়। ‘অভিযাত্রী’ দলের আমরা সবাই এভাবেই পাশে থাকি একে অপরের। তাই আমার একা ভ্রমণের কথা শুনে অনেকেই চলে এসেছেন। হঠাৎ ড্রাইভার সাহেবের ডাক, বাস ছাড়ছেন। সবাইকে বিদায় দিয়ে উঠে পড়লাম বাসে। আমি প্রচুর ঘুমাতে পারলেও কেনো জানি সেই রাতে এক মিনিটের জন্যেও ঘুমাতে পারিনি! এক মিনিটও না ঘুমানো এক বিশাল রাতের যাত্রা শেষে ভোর ৫ টা বেজে ৪ মিনিটে পৌঁছলাম দর্শনা বাজারে। নেমেই হাঁটা শুরু করলাম! ভাবলাম ৪ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই যাবো। সামনে এগিয়ে গেলাম প্রায় ৫০০ মিটারের মতো। এমন সময় পেছন থেকে আওয়াজ এলো, আপু বর্ডার যাবেন নাকি? বললাম হ্যাঁ! কিন্তু হেঁটে যেতে চাই। ছেলেটা খুব মায়ার সহিত বললো, “আমরা আপনাদের জন্যই এই সময় আসি আপু না গেলে কেমনে হয় বলেন?” ছেলেটার কথা শুনে বেশ মায়া কাজ করলো তাই ভ্যানে উঠে বসলাম। শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, নির্জন রাস্তায় বেশ লাগছিল! ভোর ৫টা বেজে ৩৫ মিনিটে বর্ডারে নামিয়ে দিলো। বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন ভোর ৬:০০ টা থেকেই শুরু হয়ে যায়।
রফিক ভাইয়ের কল্যাণে এই অংশের ইমিগ্রেশন খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেলো। শুরু হলো বিজিবির ব্যাগ চেকিং এবং পাসপোর্ট এন্ট্রির কাজ। শেষ করেই হাঁটা দিলাম ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনের দিকে। প্রায় ৫০০-৬০০ মিটার হেঁটেই পৌঁছে গেলাম ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন পয়েন্টে। এই অংশের কাজও বেশ দ্রুত শেষ হয়ে গেলো এবং চলে গেলাম কাস্টমস এ। সঞ্জয়দা’র সহায়তায় এখানকার কাজও বেশ দ্রুত শেষ হলো। দাদার কাছ থেকেই একটা সিমকার্ড নিয়ে নিলাম। এরপর গেদে স্টেশন থেকে বালিঘাট পর্যন্ত ট্রেনের টিকেট কেটে নিলাম।
সকাল ৮ টা বেজে ৪৫ মিনিটের ইএমইউ লোকাল ট্রেনে করে চলে গেলাম দমদম স্টেশনে, যদিও দমদম স্টেশন থেকে আবার ১১ টা ৪ এর লোকাল ট্রেনে চেপে বালিঘাট যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দমদম স্টেশনে আসতে দেরি হওয়ায় সেই ট্রেন মিস হয়ে যায়। তাই সেখান থেকে মেট্রো চেপে চলে গেলাম দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে। সন্দ্বীপ দা আগে থেকেই সেখানে ছিলেন। তিনিও একজন সাইক্লিস্ট। গুরুর মাধ্যমে পরিচয়। আমি স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতেই দাদার সাথে সাক্ষাৎ ঘটলো। এরপর দাদার মটর বাইকে চেপে চলে এলাম উনার বাড়িতে।
এসেই আলাপ হলো সন্দ্বীপ দাদার মায়ের সাথে। দাদা এবং দাদার মা দুজনই চমৎকার মানুষ! আড্ডা চললো প্রায় ঘন্টা খানেক। এরপর ফ্রেশ হয়েই বসে গেলাম দুপুরের আহারের জন্য। আহার শেষে শুরু হলো ফের আড্ডা এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা, সে আরেক ইতিহাস!
প্রায় সন্ধ্যে! আমি আর দাদা সাইকেল নিয়ে বের হলাম আশে-পাশে ঘুরে দেখবো বলে। এরই মধ্যে বালিখালের বিভাজন রেখা পেরিয়ে উত্তরপাড়া প্রবেশদ্বারের কিছুটা সামনে এগিয়ে সেখানকার কলেজ বাস স্টপেজে টং দোকানে এক কাপ মটকা চা খেয়ে নিলাম। শুরু হলো হুগলি জেলা। হুগলি জেলাতেই উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ পাবলিক লাইব্রেরি (বেশ প্রাচীন লাইব্রেরি)। বন্ধের দিন হওয়ার কারণে ভেতরে ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাতে কি? হুগলির অলি-গলি ঘুরে বেড়িয়েছি।
প্রায় আড়াই ঘন্টা সাইক্লিং করে সাক্ষাৎ করেছি সন্দ্বীপ দা’র বন্ধু সৌম্য দা’র সঙ্গে। সৌম্য দাদা এবং বৌদি দুজনই বেশ বন্ধু বৎসল। সেখানেও প্রায় এক ঘন্টার আড্ডা শেষে রাত ১১ টায় আমরা নীড়ে ফিরলাম। আমি সবসময় বলি ‘জীবন সুন্দর’ !
এপি তালুকদার,স্পোর্টস টিচার, চিটাগাং গ্রামার স্কুল ঢাকা, ফুটবল রেফারি- বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, সাইক্লিস্ট, অ্যাথলেট ও ম্যারাথনিস্ট