(এপি তালুকদার নিয়মিত ভ্রমণ করেন গ্রুপের সাথেই। তবে সম্প্রতি তিনি একাই ঘুরে এসেছেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। ‘একলা ভ্রমণের গল্পকথা’- শিরোনামে তাঁর ১৪ দিনের ভ্রমণ কাহিনি শেয়ার করেছেন রোকেয়ানামার সাথে। আজ রয়েছে দ্বিতীয় পর্ব।)
এপি তালুকদার
বিকেল ৫ টায় শিয়ালদহ থেকে দিল্লির ট্রেন। শিয়ালদহ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য আমাকে বালিঘাট স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে চাপতে হবে। সন্দ্বীপ দা’র বাসা থেকে বালিঘাট স্টেশন দেড় কিলোমিটার। দাদার কাজ থাকায় আমাকে একাই স্টেশনে যেতে হবে। তাই দাদা কিছুটা চিন্তিত আমি একা যেতে পারবো তো? আমি বার বার বলেছি দাদা আমি ম্যাপ দেখে চলে যেতে পারবো। দাদা বললেন, “সোহাগ যখন এসেছিলো তখন এই ম্যাপ দেখতে যেয়েই ট্রেন মিস করেছিলো।” তাই দাদা বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমাকে সবকিছু পই পই করে বুঝিয়ে দিলেন। “প্রথমে ইউকো ব্যাংক তারপর বামের রাস্তা দিয়ে চলে যাবে মুখার্জি সুইটস। যে রাস্তায় গতকাল রাতে সাইকেল চালানোর সময় দাঁড়িয়েছিলে সেই রাস্তা ধরে এবং সেখান থেকে ব্রিজের নীচ দিয়ে সোজা গেলেই টিকিট কাউন্টার। কাউন্টারের সাথেই একটা লিফট দেখবে সেটাতে উঠবে না তাহলে ডানকুনি প্লাটফর্মে চলে যাবে। কাউন্টার থেকে একটু দূরে একটা লিফট পাবে সেটাতে উঠলেই পেয়ে যাবে।” এতো দারুণ ভাবে দাদা সব বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ব্যাগ গুছিয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কাকিমার কাছ থেকে ১:৪৫মিনিটে বিদায় নিয়ে বের হয়ে আমি ১৫ মিনিটের মধ্যেই স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। মেসেজ করে দাদাকে জানালাম আমি স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি।
২ টা বেজে ৩৩ মিনিটের ট্রেন ১০ মিনিট লেট করে ২ টা বেজে ৪৩ মিনিটে এলো। ট্রেনে উঠেই দাদাকে জানালাম যে, ট্রেন ছেড়েছে। কেননা দাদাও এ ট্রেনেই উঠবেন দুটো স্টেশন সামনে বরাহনগর স্টেশন থেকে। কিছু সময় পরেই দাদাও ট্রেনে উঠলেন। কিন্তু উনি অন্য বগিতে, তাই দেখা হয়নি। আমাদের কথা হচ্ছে মেসেজে। দমদম স্টেশনে তিনি নেমে আমি যে বগিতে ছিলাম সেই একই বগিতে আসলেন, যাত্রা চলছে। গন্তব্য শিয়ালদহ। বিকাল ৩ টা বেজে ২৫ মিনিটে শিয়ালদহ স্টেশনে নামলাম। এবার গন্তব্য দিল্লি। দিল্লির ট্রেন বিকাল ৫ টায়। হাতে অনেকটা সময় আছে তাই দাদা বললেন, চলো আশ-পাশটা ঘুরে দেখি। চললাম দাদার পেছন পেছনে। শিয়ালদহ স্টেশন মার্কেট প্রায় পুরোটা ঘুরে দেখলাম। সেখানকার গরম গরম পুরি খেলাম এবং ট্রেনের জন্য কিছু শুকনা খাবার কিনে নিলাম, যেহেতু লম্বা জার্নি।
৪ টা বেজে ৩২ মিনিটে চলে গেলাম স্টেশনে। এনাউন্সমেন্ট শুনতে পেলাম ‘দূরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেন ১১ নাম্বর প্লাটফর্মে।’ চলে গেলাম ১১ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা দূরন্ত ট্রেনের বি৩ বগিতে। বগিতে বসেই আমি আর দাদা চা খেলাম এবং খাওয়া শেষে দাদা ট্রেন থেকে নেমে গেলেন। বিদায়ের সময় জানালার গ্লাসের এপার-ওপার ডুয়েলফি তুলে দাদাকে বিদায় দিলাম।
বিকাল ঠিক ৫.০০ টায় ট্রেন চলা শুরু হলো। আমার পাশে বসেছেন সুমন দি। আমাদের প্রাথমিক পরিচয় হলো, তারপর চলছে আলাপচারিতা। এর মধ্যেই দিদি বললেন, “আপকা স্মাইল বহত সুন্দার!” শুনেই আমি হেসে ফেললাম। গল্প চললো প্রায় ২ ঘন্টা। দিদির বাবার বাড়ি বিহার আর শ্বশুর বাড়ি কলকাতা। তাঁর দুই মেয়ে। এক মেয়ে বেঙ্গালুরুতে পড়ে আরেক মেয়ে দিল্লিতে। দিদি দিল্লিতে তার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতেই যাচ্ছেন।
আজ এখানেই,,,,, আরও গল্প হবে। জীবন সুন্দর! (১৭ জুলাই, ২০২৩)
লেখা: এপি তালুকদার,স্পোর্টস টিচার, চিটাগাং গ্রামার স্কুল ঢাকা, ফুটবল রেফারি- বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, সাইক্লিস্ট, অ্যাথলেট ও ম্যারাথনিস্ট