0

প্রসঙ্গ: দ্বিতীয় বিয়ে এবং সন্তান

Share

মিম্ মি রহমান

বর্তমান সময়ে ফেসবুকে বিবাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে পাত্র/পাত্রী চেয়ে যে পোস্টগুলো আসছে লক্ষ করলে দেখবেন, তার একটা লম্বা অংশ দখল করে নিয়েছে ডিভোর্সড এবং বিধবা/বিপত্নীক। বিষয়টা খুবই পজিটিভ। অসামাজিক এবং ধর্মীয় রীতি বর্হিভূত উপায়ে জৈবিক চাহিদা পূরণ না করে এখনো মানুষ যে সমাজ স্বীকৃত পদ্ধতিতেই আগাচ্ছে , সাহস করছে সে বিষয়টা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। 

তবে ডিভোর্সড অথবা বিধবা/বিপত্নীক পাত্র/পাত্রীর পোস্টে দারুনভাবে সুগার কোটেড একটা পয়েন্ট থাকে। ‘সন্তানহীন ডিভোর্সড/ বিধবা/ বিপত্নীক’ অথবা লাইনটা এরকমও থাকে “সন্তান তার মায়ের/বাবার কাছে থাকে”। অর্থাৎ বায়োডাটাতে পরিস্কার বোঝানো হচ্ছে, “আমি একদা বিবাহিত ছিলাম, আমার সন্তানও ছিল কিন্ত এখন যে নতুন করে বিয়ে করে সংসার শুরু করতে চাচ্ছি সেখানে আমি পাক্কা সাফ। সুতরাং পবিত্র সিঙ্গেল হিসেবে এন্ট্রি দিতে আসতেছি। বাচ্চারে ওর মা/বাবার ঘাড়ে চাপিয়ে নতুন বৌ/জামাইরে নিয়ে রক এন্ড রোল সংসার করমু এইবার আমি।”

সিরিয়াসলি !!!!!! 

ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা জীবন দর্শন আছে। আমি মনে করি, এই পৃথিবীতে যে মানুষটা তার নিজের সন্তানের এবং নিজের মা-বাবার হতে পারে না সে আদতে কারোরই হতে পারে না। আর যে মানুষটা মা/বাবা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল নয়, সে কিভাবে শুধুমাত্র একটা সিগনেচারের সুবাদে আবদ্ধ বৈবাহিক সম্পর্কে প্রাপ্ত স্বামী/স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বশীল হবেন ? হাউ কাম??? লজিক কি বলে ?

আর যারা এদের সাথে জীবন শুরু করতে চাচ্ছেন এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এটা ভেবে, যাক বাবা বাচ্চাসহ ওকে  তো আর পেতে হচ্ছে না। তাদেরকে বলতে চাই, দরকার কি ভাই/আপা আবারো জটিল একটা সম্পর্কে ঢোকা। বিয়ে তো আর এমন কোন রসগোল্লা না যে বারবারই তা গলধঃকরণ করতেই হবে ? আপনি তো জীবনে একবার ধরা খেয়েছেনই, আর কতবার নিজেকে ছোট করতে চান নিজেরই কাছে ?? 

যখন আপনি আবার একজন ডিভোর্সড/বিধবা/বিপত্নীক মানুষের সাথে সংসার শুরু করতে  মানসিক এবং সামাজিকভাবে প্রস্তুত ঠিক তখন আপনি নিজেকেও প্রশ্ন করুন, আপনি প্রস্তুত তো নতুন সঙ্গীর সন্তানের সাথে একটা ব্যালেন্স সম্পর্ক মেইনটেইন করতে ? একেবারেই জরুরি না যে আপনাকে ঐ বাচ্চাটার বাবা-মা হয়েই সম্পর্ক মেইনটেইন করতে হবে। মা-বাবা হওয়া এতোই সোজা নাকি ? যে ছোট্ট মানুষটার কপালে নিজের জন্মদাতা/জন্মদাত্রীর পিতৃস্নেহ-মাতৃস্নেহই জোটে নাই তাকে আরেকজন ভিন্ন মানুষ শুধুমাত্র মা/বাবার সাথে রোমান্টিক সম্পর্কের সুবাদে আবদ্ধ হচ্ছে বলেই সন্তান স্নেহ দিয়ে ফেলবে, না এতোটা আশা ঐ বাবুগুলো কিছুতেই করতে পারে না !

তবে মানুষ তো শুধু একটা প্রাণী আর না, মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তাই যদি আপনি মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে ডিভোর্সড/বিধবা/বিপত্নীক মানুষটাকে বিয়ে করলে প্লিজ একবার অন্তত চেষ্টা করে দেখবেন মানুষটার সন্তানটিকেও কাউন্ট করতে। একটু আদর দিয়েই দেখবেন। হেভেনলি রিলেশনশীপের ফ্লেভার পাবেন জীবনে। যতটুকু হারিয়েছে ফিরে পাবেন তার থেকে কয়েক গুণ বেশি। আর যে মানুষটা আপনার হবে সেই মানুষটাও আপনাকে ভালোবাসার সাথে সাথে সম্মান করবে আপনার মানবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য।  

কিছুতেই ভুলে যাবেন না, মানুষটা আপনার কাছের মানুষ হওয়ার আগেই বাচ্চার মা/বাবা হয়েছে। তাই ঐ মানুষটাকে যদি আসলেই আপনি নিজের করতে চান তাহলে তাকে তার সন্তান সহই মেনে নিন। না হলে বেস্ট হচ্ছে কুইট করা। অবিবাহিত , সন্তানহীন বহু বিবাহযোগ্য নারী পুরুষেরও তো আর অভাব নেই এখন সমাজে। গো ফর দেম। 

আর এখানে সন্তান যার সেই মা/বাবারও প্রচুর দায়িত্বশীল হবার দরকার নতুন পার্টনার এবং সন্তানের ভেতরে সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি করে দিতে। নিজের গর্ভজাত সন্তানের মা’ই তো হয়ে উঠতে পারে না কত নারী, কত পুরুষ, স্পার্ম দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে। সেখানে আরেকজনের সন্তানের মা বা বাবা হয়ে ওঠার যে জার্নিটা তা অত্যন্ত দুরূহ একটা কাজ। খুব সময় নিয়ে যত্নের সাথে এই সম্পর্কটা তৈরি হওয়া  দরকার। আমরাই কি পারব নিজের মা বা বাবার ভাগ কাউকে দিতে ??? প্রশ্ন করুন নিজেকে। 

সহজ না কাজটা। আবার আমরাই কি পারব আরেকজনের সন্তানের মা/বাবা হয়ে যেতে হুট করেই ? না, সম্ভব না, এটা একটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। 

মিম্ মি রহমান, চিকিৎসক ও লেখক