0

শীর্ষেন্দু  মুখোপাধ্যায়ের সাথে আড্ডা

Share

কাজী আসমা আজমেরী 

ছোটবেলা থেকেই উপন্যাস এবং গল্পের বই পড়তে আমি খুব পছন্দ করি। আর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বই একবার ধরলে শেষ না করে যেন ওঠার আর কোন অবকাশ নেই। ক্লাস সেভেনের মধ্যেই মানবজমিন, দূরবীন সহ তাঁর আরো অনেক বই পড়া শেষ। কিশোরী বয়সে সেই তখন থেকেই এই লেখকের একটা ছবি মনে গেঁথে ছিল। তাঁর লেখা বিভিন্ন উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে বসাতাম। সেটা কখনো প্রতিবাদী, কখনো বিদ্রোহী আবার কখনো কোন সংগ্রামী নারীর। তাঁর লেখার মাধ্যমেই খুঁজে নিয়েছি  জীবন চলার অনেক উদ্যম আর অনুপ্রেরণা।

এই স্বপ্নের জাদুকর যার কলমের ছোঁয়ায় বাংলা সাহিত্য হয়েছে সমৃদ্ধ, তরুণ প্রজন্মের কাছে যিনি একটি প্রেরণার নাম। সেই স্বপ্নের মানুষটির সাথেই দেখা হল গতকাল পড়ন্ত দুপুরে। যাকে এতদিন কেবল বইয়ের পাতায় কল্পনা করেছি সেই মানুষটির সামনাসামনি বসে কথা বলা, সেই আনন্দঘন সময়টার কথা বলে বোঝাতে পারবোনা। অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর লেখালেখি নিয়ে। কথা প্রসঙ্গে তিনি একসময় দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, যদিও কিছুটা কমে এসেছে তবে এখনো বাংলাদেশে তার বহু বই কপি করে বের করা হচ্ছে। 

কথা হলো মানবজমিন উপন্যাসের চরিত্রগুলো নিয়ে। এছাড়াও বাংলাদেশে যখন আসেন তখন বিভিন্ন জায়গায় যে আড্ডা দিয়েছেন সেই গল্পও শোনালেন আমাকে। কলকাতা থেকে আমার জন্মস্থান খুলনা খুব কাছেই। যদিও তিনি কখনো খুলনা আসেননি। এ সুযোগে আমিও তাকে সুন্দরবন দেখার নিমন্ত্রণ করতে ভুললাম না। আমি প্রিয় লেখককে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার নিমন্ত্রণ জানালাম। গল্প, উপন্যাস আর দুই বাংলার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতেই কিভাবে যেন পেরিয়ে গিয়েছিল ঘন্টাখানেক সময়।

কলকাতার যাদবপুরে অবস্থিত তাঁর বাসাটি খুবই ছিমছাম। এই বাসার নিচের তলায় থাকেন তিনি। বাসার পাশেই পার্ক, বাড়ির সামনেই রয়েছে চমৎকার সব কফি শপ আর বৈঠকখানা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল, তার বাড়ির রাস্তা ধরে যেতে যেতে কাকের স্বভাবসুলভ যত্রতত্র মল ছেড়ে দেয়ার অভ্যাসটির শিকার হলাম আমি। যদিও আমাকে সে রক্ষা করেছে কিন্তু আমার  মোবাইলটি একেবারেই যা ইচ্ছে তাই অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। লেখকের বাসায় গিয়ে প্রথমেই এসব পরিষ্কার করে নিলাম। ভাগ্য ভাল একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিয়েছিলেন তার সাহায্য  নিতে পেরেছিলাম। এই  মহিলা লেখকের সেবা-শুশ্রুষা করেন।

এই দুপুরবেলা সময়টা তিনি  বিশ্রাম নেন ,আর রাতে বই লেখেন। তাঁর ড্রয়িং রুমে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া অনেকগুলো পদক ও সংবর্ধনার ছবি। গল্প করতে করতে খুব আফসোস করেই বললাম বঙ্গ সম্মেলনে রেজিস্ট্রেশন করেও যেতে পারিনি বাবার অসুস্থতার জন্য। তিনি বঙ্গ সম্মেলনে গিয়েছেন দুই- চারবার সে কথাও বললেন। আমার অবশ্য মন তখন বারবার জানতে চাচ্ছিল, তাঁর কোন গল্পে ট্রাভেলার কারেক্টার আছে কিনা তা জানার। ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পর থেকে বই পড়াটা আর আগের মতো ধরে রাখতে পারিনি। অবিরাম ছুটে চলা সময়ের জন্য আর সময় পাইনা আগের মত করে বই পড়ার।  কিন্তু বই যে পড়া হয়না সেই কষ্টটা মনে মনে পীড়া দেয় ঠিকই। 

 শীর্ষেন্দু  কাকাকে দেখালাম খুলনায় আমার করা সেই ছোট্ট লাইব্রেরির ছবিগুলো। সেখানে বাচ্চারা বই পড়ছে দেখে তিনি খুবই খুশি হলেন এবং এপার বাংলার লোকজন যে তাকে এতো ভালোবাসে সেটাও তাকে অনেক আনন্দ দেয়। এভাবেই আমাদের সাক্ষাতটি শেষ হলো। কলকাতার কাকাবাবুদের সাথে যে আমার কতটা  সখ্যতা সেটা নিয়েও অনেক গল্প হলো। তারপরে আমাকে উঠতে হল আরেক জায়গা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে প্রিয় লেখকের সাথে দেখা হওয়ার সময়টাতে এতোটাই এক্সাইটেড ছিলাম যে ভুল করে তাঁর বাসাতেই মোবাইলটা রেখে এসেছিলাম…

কাজী আসমা আজমেরী, বাংলাদেশি পাসপোর্টে ১৩০ দেশ ভ্রমণ করা বিশ্ব পরিব্রাজক