0

লাইফ ইজ নট এ বেড অব রোজেস (পর্ব-৫)

Share

শারমিনুর নাহার

অফিসের গাড়িটি যেখানে নামিয়ে দিল সেখান থেকে আমার সন্তানদের কাছে পৌঁছতে ৫০ টাকা রিকশা ভাড়া খরচ হয়। কিন্তু ঘরে ফিরতে মন সায় দেয় না। তাদের বাবা ঘরে আছেন তাই একটু মন রিলাক্স। ‘যাবো না আজ ঘরে/ আকাশ পানে বাহিরকে আজ নেবরে লুট করে।’ নিজের সঙ্গে কথা শেষ হয় না। বিশাল একটা হাঁটা দিতে ইচ্ছা হয়। হাসানকে নিয়ে কি কি লিখব আওড়াতে থাকি ; তখন আমি দেশের দ্বিতীয় প্রধান সংবাদপত্রের এডিটরিয়ালে কাজ করি। খুব সম্ভবত একুশে ফেব্রুয়ারির সংখ্যার জন্য উনার লেখা নেবার দায়িত্ব পড়েছিল। উনি বলবেন আর আমি লিখব। অনেকটা লেকচার উঠানোর মতো। এই কাজে আমার দক্ষতা আগেই প্রমাণিত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে লেকচার তুলতে আমার জুড়ি ছিল না। সবাই তখন আমার খাতাটা ফটোকপি করত। একটা ঠান্ডা- হিম জায়গা দরকার। ‘ঠান্ডা নামছে হিম, কচি নারিকেলের পাতা একবার পিঠ দেখায় একবার বুক দেখায়’- সুহাস, ফেকু, ইনাম- এই তিনটা নাম খুঁজে বের করতে যে স্টুডেন্টদের কি পরিমাণ বেগ পেতে হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরপরে কি হল – এই যে যাচ্ছে বিল পেরিয়ে- মাঠ পেরিয়ে বগলে ট্রানজিস্টার নিয়ে… বগলে ট্রানজিস্টার একটা প্রজন্ম। আমাদের ছোটবেলায় একটু দূরে যারা চাটাই বুনত তারা এমন ট্রানজিস্টার পাশে রেখে কাজ করত। সারাদিন হ্যাঁ ভাই ও ভাই বলে সিনেমার বিজ্ঞাপন চলত, সাবিনা- রুনা- রহমতুল্লাহ. গান গেয়ে তাদের কাজে আনন্দ দিতো। আমরা সেই পথে স্কুলে যেতাম। ‘বাংলাদেশ বেতার’ শুনলে মনের মধ্যে উঁকি মারত ‘বেতার’- যার তার নেই.. কিভাবে চলে- কে কথা বলে ওর ভেতরে..ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করতে হয় ট্রানজিস্টার চেনো? সত্যিই সহজ নয় কিন্তু হাসানকে পড়া কারণ তার গদ্য গড়গড়িয়ে যায় না। খুব সচেতন বুঝে এগোতে হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে ছবি তৈরি করতে হয়। এত অল্প কথায় সূক্ষভাবে বলেন যে, সচেতন না থাকলে মিস হয়ে যায়। সেবার তিনি কথা বলেছিলেন মানে লিখেছিলেন ভাষার প্রসঙ্গকে দর্শনের সঙ্গে মিলিয়ে। ভালো লেগেছিল। পুরোটা শেষ হলে আবার পড়ে শুনিয়েছিলাম। পছন্দ করেছিলেন খুব। এর পর থেকে সব লেখাগুলো যেনো করে দেই তা বলেছিলেন। করেছিলামও কয়েকটি। কোন গোলযোগ বাঁধেনি। মাঝে মাঝে নিজে ফোন করতেন সম্মানি চেয়ে। একবার বইমেলায় ইত্যাদি প্রকাশনির স্টলে সস্ত্রীক দেখা হয়েছিল। প্রায় মেলা ভাঙছে তখন। ৯টা বাজে প্রায়। একসঙ্গে বেরিয়েছিলাম। আমাকে ড্রপ করেছিলেন হাতিরপুল পর্যন্ত। তখন লেখকের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলেও, তেমন আলাপ জমেনি। ক্লান্ত ছিলেন খুব। আর একবার অনেকটা পথ মাড়িয়ে এসেছিলাম লালমাটিয়ায়। উনার কোন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সম্ভবত কোন একটা লেখা এডিট করতে। ঈদ সংখ্যার বড় লেখা হতে পারে- জীবনস্মৃতি ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’র কোন অংশ হতে পারে। সেজন্য হয়ত সিরিয়াস ছিলেন বেশি।

মিউ মিউ মিউ করে ব্যাগে বেড়াল ডাকছে..হ্যাঁ বলো… লেবু এনো..এ্যামব্রোক্স পেডিয়াটিক লাগবে…আচ্ছা। পথ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। যাক খানিকটা তো মাথায় গোছানো গেল। ঘরে ঢুকে লিখব। নিজেকে প্রবোধ দিলাম। হা হা.. দুটো শিশুরই শরীর খারাপ। আসন্ন শীত আগমনের প্রস্তুতি তাদের নাজেহাল করেছে। না, আমার কোন তাড়া নেই। কেউ লেখা চায়নি। কেবল প্রত্যেকে তাদের স্মৃতিচারণ করেছেন বলেই আমারও একটু সাধ হয় নোনা জলে ঘ্রাণ নেই। এত কথাশিল্পীর সঙ্গে সামান্য সম্পর্ক বা তার জীবনের সঙ্গে ন্যূনতম যোগ এটা লিপিবদ্ধ থাকল না..একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বেঁচে থাকতে চান।’ ‘যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বেঁচে থাকতে চান।’ ‘যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বেঁচে থাকতে চান।’ ‘যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বেঁচে থাকতে চান।’ ‘যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বেঁচে থাকতে চান।’ ‘যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বেঁচে থাকতে চান।’ ‘যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বেঁচে থাকতে চান।’ ‘যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বেঁচে থাকতে চান।’

ঘর ঘর ঘর

তুই আমার পর

চারপাশ সুনসান কুনকান গুনগান। কোন খেদ নেই। বিরাগ নেই। নিজেকে কোথায় স্থাপন করব তার কোন হদিশ জানিনা। এই ঘর আমার নয়। এখানে আামর কোন ঘর নেই ‘নিজের একটি কামরা’র মতো আমার কোন কামরা নেই। কেবল কি কামরা? আমার কি কোন দেশ আছে কোন জন্মভূমি? জীবনের একটা বাস্তব মুহূর্তে এই উপলব্দি আরো প্রগাঢ় হয়েছিল। যখন প্রথম স্বামীর বাড়িতে গেলাম। সেও ভীষণ কেয়ারিং ছিল যদিও শেষ পর্যন্ত সবই ফায়ারিং। কোন কেয়ারিং নয়। কেন আমি আমার নিজের বাড়িতে ঈদের ছুটিতে যেতে পারব না? মা বললেন, তোমার এখন ওর গ্রামের বাড়িতেই যাওয়া উচিত? কেন মা? বিয়ের পর….যদিও কথাটা এমন করে কেউ বলেনি তবে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে। সেখানে যাবার পরে এই বোধ আমার হল যে- নিজের কোন কামরা কেবল নয় কোন বাড়ি- ঘর- দেশই নেই। এটা নারী বলে নয়, খোদ পুরুষদেরও কি আছে?

আবারও অপরিবর্তনীয়

আপনি আমার এখানে বসেন! দীর্ঘ ক্লান্তি নিয়ে তিন ঘন্টা দাঁড়ানোর পায়ে ব্যথা নিয়ে ৩০৬ নম্বর কক্ষে ঢুকেই বুঝতে পারলাম ডান দিকে বসা লোকটাই সবার চেয়ে দক্ষ। ওয়েটিং চেয়ারে বসেই তার কাজের নমুনা দেখছিলাম। আজ সারাদিন যতগুলো টেবিলে গেলাম অবাক হয়ে লক্ষ করলাম দক্ষ লোকদের আমি চিনতে পারি। এই লোকটা আঙ্গুলগুলো চালাচ্ছে পুরো এলিয়েনদের মতো। ওহ্, সরি আমি কি এলিয়েন দেখেছি? হুম দেখেছি- মুভি- কল্পনা (নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধ্য)। লোকটার আঙ্গুলগুলো বড় আবার আঙ্গুলের শীর্ষভাগ একটু মোটা মত। যেনো এখানেই তার যাবতীয় শক্তি লুকিয়ে আছে। তাই সে যখন আমাকে তার সামনে বসতে বলল তখন একবার আনন্দ হল আর একটা দুঃখও হল। আনন্দ হল কারণ তিনি দক্ষ মানুষ বলে। এ আমার এক অদ্ভূত স্বভাব। সে ফকিরই হোক, হয়ত ভিক্ষা করছে। তার ভিক্ষা করবার দক্ষতাও আমাকে বিমোহিত করে। যে, যে কাজই করুক সে যদি তাতে দক্ষ হয় তাহলে মন ভরে যায়। আর দুঃখের কারণ পাসর্পোটে এত কারেকশন আছে যে দক্ষ লোক ছাড়া তা মেটানো সম্ভব নয়। উনি সেটা করতে গিয়ে হয়ত প্রথমে বিরক্ত হবেন না। কিন্তু আমি জানি ঠিকই তিনি বিরক্ত হবেন। কারণ কাজটাই এমন। বললেন, আচ্ছা কি আশ্চর্য আপনার স্পাউস চেঞ্জ হল ক্যামনে? ঠিকানাও চেঞ্জ? আমি কেবল হুম বললাম। বললেন, এত চেঞ্জ হলে দুই দিনে নতুনটা পাওয়া যাবে না। ওখানে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হবে। মিনিমাম দুই সপ্তাহ তো লাগবেই। কিন্তু আমার সময় নেই। দুই বছর আগে পাসপোর্টের ডেট শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে স্পাউস চেঞ্জ হয়েছে..নিজে নিজে নানা কথা আউড়ে চললেন …