ঊর্মি চৌধুরী
ধরো, হঠাৎ আকাশ ছেয়ে বৃষ্টি নামলো
পার্কের বেঞ্চিতে অপেক্ষায় থেকে থেকে
তুমি ভিজে একাকার,
দূরের দুর্বল বাহুর ক’জোড়া নষ্ট চোখ,
চেকে দেখে তোমার অসহায়ত্ব
আমি কাক ভেজা হয়ে দৌড়ে এসে
মেলে ধরলাম রঙিন ছাতাটা,
হাতে না হয় ছিল ভেজা কদম দুটো।
কৃষ্ণচূড়ার রঙ মেখে তোমার রাঙানো গালটা
বৃষ্টির পরশ নিয়ে অশ্রুতে ভরে উঠলো,
নিমিষেই তোমার সমস্ত অভিমান ধুয়ে গেলো,
ভেসে গেলো ঝরা পাতার নৌকায়।
দেরী হওয়ার কারণ ছিলো বৈকি,
বাসে ভীড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই তরুণীর,
অফিস থেকে বাড়ি ফেরার তাড়া,
যার চোখেমুখে অযাচিত নিষিদ্ধ স্পর্শের ভয়,
নিজেকে আড়াল করার আপ্রাণ চেষ্টা
কী করে ফেলে আসি তারে বলো,
যতটুকু পারি আগলে, নামিয়ে দিয়ে আসি গন্তব্যে।
বিনিময়ে একটা তৃপ্তির হাসি,
মায়াবী চোখ দুটোতে ভাষাহীন কৃতজ্ঞতা,
তারপর হাত নেড়ে বিদায়ের পালা।
ভুল কিছু কী করলাম!!
তারপর তোমায় নিয়ে চপল পায়ে হেঁটে গেলাম
ঐ নষ্ট চোখের মোকাবেলায়,
সানগ্লাসটা খুলে পড়িয়ে দিলাম তার চোখে
বললাম,আমি যা দেখি তুই কী তা দেখিস?
প্রশ্নটা বুঝি যুৎসই হয়নি তার,
ভয়ে আড়ষ্ট হতে লাগলো,
শামুকের মতো কুঞ্চিত হতে চাইলো খোলসে।
ঠোঁট দুটো বিড়বিড় করে থেমে গেলো বটে
আমি বলি,থাম।
কলারটা ধরে টেনে বললাম,
আমি ভেজা শাড়িতে দেখি ভিজছে কেউ
সে কারো আদুরে বোন নয়তো ভাগিনী, কন্যা
আঁচলা টেনে ঢাকছে সম্ভ্রম
ক’টা শকুনি গিলে খায় তার বক্ষ,
দেখেই ক্ষুধাটা মিটিয়ে নেয়
আমার কী করণীয় তবে?
তুমি কী করবে?
কথা সরে না মুখে, দৌড়ে কেউ পালালো না তারা,
চোখ দুটো বলছে,
ভুলে ছিলাম আমরা ক্ষমা করে দাও এবার, শেষবার।
তুমি কিছু না বুঝেই কান্না জুড়ে দিলে
বারেবার পিছু টানলে আমায়,
আমি বলি ভয় নেই,
এসো দেখি, কথা বলি তাদের সাথে।
মানুষ যদি হয় কথাতেই শিক্ষা পায়,
আর অ-মানুষ সে কিছুতেই শোধরাবার নয়।
রুখে দাঁড়াও,তোমার থেকেই আসুক প্রতিবাদ
নিজেকে নিজেই সামলে নাও।
পৃথিবীটা তাদের নয়, কারো একার নয়,
এটা তোমারও।
আমাকে সবসময় সময় মতো কোথায় পাবে তোমরা?
যদি এমন কিছু হয়, কেমন হবে বলো তো!