0

পত্র লেখা

Share

ঊর্মি চৌধুরী

‘পত্র দিয়ো’ …বন্ধু ও রোকেয়ানামার সম্পাদক ফারাহ জাবিন শাম্মী’র চিঠির বক্সটা খুব মনে ধরেছে, এই ক্ষুদে বার্তার যুগে এসে হলদে খামে কিংবা নীল খামে পত্র লিখতে না পারলেও কাল্পনিক কিছু চিরকুট, কিছু চিঠি আনমনে গুনগুনিয়ে গেলো মনে। এমনই একটি চিঠি রোকেয়ানামাতে। পাঠক চাইলে উড়োচিঠির হিড়িক পড়ে যাবে!

প্রিয়মুখ,

কেমন আছো? অবাক হলে বুঝি, আজও শিরোনামে প্রিয়মুখ লেখা দেখে? না,তোমায় এখনও অন্য নামে চিনতে পারিনি, তোমার অন্য কোনো নামও ঠিক করিনি। ভাবছো অলস, কুড়ে আমি! কোনো কাজের কাজই করতে পারি না এখনও? নাই কাজে খই ভাজছি মনে হচ্ছে তোমার! যদি ভেবে থাকো এমনটি, তোমায় বলছি, না, একদম তা নয়, আমি বদলে গেছি অনেকটা, বেশ খানিকটাই বলতে পারো। এরপরও, এখনও যেটা থেকে গেছে সেটা আমার একান্ত অভ্যেস বা বদভ্যেসটুকু। আমি চাইলেও ভুলতে পারি না তারে। বুকের বাঁ’পাশটাই এখনও একটা ব্যথা চিনচিন করে, ঐ ব্যথাটুকুই আমাকে কাবু করে রেখেছে, পুরোদমে পাল্টে যেতে দেয়নি।

জিজ্ঞেস করলে না, ব্যথাটার নাম কী! কিংবা অভ্যেস বদভ্যেসের ধরণটা কীরকম ছিলো।

ভুলো মনা তুমি, সবটাই বুঝি ভুলে গেলে! আচ্ছা এটুকুন তো বুঝো ক্ষুদে বার্তার এ যুগে এসেও কেউ কেউ কেন এখনও নীলখামের অপেক্ষায় থাকে? কেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেও মন খুলে বলতে পারে না সে কী চায়! কেন চায়! কীসে এত মোহ! কোন মায়ার সাগরে সবুজ মনের তরী ভাসিয়েছে সে, যেখানে কূল কিনারা না পায়!

বলতে পারলে না তো! আরে এসব আমার আধো জাগা কল্পনার কথামালা, আমার গহীনের প্রশ্ন ভাণ্ডারে জমায়িত উত্তপ্ত লাভা। এসব আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়, আস্তো গিলে খায় না। একসাথে দপ করে করে জ্বলে উঠে নিভে যায় না, ধীরালয়ে ভষ্ম থেকে সলতের মতো জ্বালায়।

এত কথার ভীড়ে হারিয়ে যাই আমি, তুমি বললে না কেমন আছো তুমি। কখন বলবে তাও না জানি।চিঠির স্তুপ সামলে নিতে নিতেই ক্লান্ত হয়ে পড়বে, উত্তর লেখার সময় কই তোমার! এটাও পুরোনো কাসুন্দি, আমি বলে যাই তুমি শুনেও শুনোনি, যতটুকু শুনেছো একটা হাসিতেই সবটুকুর জবাব দিয়েছিলে। উত্তরটা আমি ভেবে নিয়েছিলাম আমার মতো করেই। আমি যে ঐ দাম্ভিক হাসিটার প্রেমে পড়েছিলাম, তুমি বুঝি জানতে?

মনে পড়ে তোমার! সেদিন সন্ধ্যের আগে আগুন রঙা শাড়ীতে সেজেছিলো গোধূলি, তুমি আনমনা ছিলে ভীষণ! আমি ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে কৃষ্ণচূড়ার প্রেমে ডুবে যাচ্ছি যেন! প্রকৃতি বুঝি আঁচ করতে পেরেছিলো কিছুটা! হঠাৎ উড়ে এলো দমকা হাওয়া, এলোমেলো বাতাসে ভেঙেছে মৌনতা। চুলগুলো অবাধ্য হলো আমার, কপাল ছুঁয়ে চুম্বন আঁকে। তুমি চাইলে নীরবতা আমি চাইলাম প্রেম। পাশ ফিরে চিরচেনা হাসিতে বলেছিলে, “রঙিন সবকিছুই তোমার সব সময়কার প্রিয়,সাথে চন্দ্রবিন্দুর টিপ। বাতাসে এলোচুলের দোল খাওয়ার নাকি একটা শব্দ আছে, তোমার কানে সেতারের  মতো বাজে, আর বলেছিলে হাসলে পৃথিবীর সব সুন্দর এসে জমা হয় প্রিয়ের ঠোঁটের কিনারায়। ব্যাস এটুকুই।”

আরও কিছু শোনার অপেক্ষায় বুদ হয়ে রইলাম আমি, তুমি চুপচাপ কী যেন শুনছিলে। তারপর আরও কিছুক্ষণ! আমি ধ্যান ভাঙা পাখির মতো তোমাকে খুঁজতে থাকলাম, কোথায় মিলিয়ে গেলে!

সেদিনের মতই ,শেষ বিকেলটা এখনও চরম চঞ্চলতায় ভরে উঠে,বেশ অবাধ্যও। কাজের ব্যস্ততা বুঝে না,তন্দ্রা মানে না, ভালোলাগা কিংবা মন্দ লাগার অজুহাত শুনতে চায় না। এমনকি আমার সে পুরোনো অভ্যেসটা ঐ যে, ডায়েরীর পাতায় পাতায় আবেগের কালি ঝরাই তাও সময়টা ধার দিতে চায় না আমাকে, কী আর করা! আমিও রঙিন বসনায় খোলাচুলে ঝুল বারান্দায় সঁপে দেই নিজেকে। দমকা বাতাস,আগুনমুখো সন্ধ্যে সবাই ছুটি চায়, ছুটি নেয় আমি শুধু ছুটি পাই না। এ কেমন মোহমায়ায় জড়িয়ে আছি বলতে পারো তুমি,প্রিয়মুখ?

কোনো একদিন বলেছিলে সময় কথা কইবে, অপেক্ষায় থেকো। আমি ভুলিনি,পারিনি ভুলতে।

আর কতক প্রহর গুনলে আঁধার কেটে যাবে, ভোরের স্নিগ্ধ বাতাস বয়ে যাবে! তপ্ত রোদে পোড়া দূুপুরটা শেষ বিকেলের নরম আলোয় স্নাত হবে!  আর কত অপেক্ষায় রাখবে আমাকে বলতে পারো!

না আমি ক্লান্ত হলেও ক্ষান্ত হতে চাই না। শত ব্যস্ততায় তোমার অপেক্ষার প্রহর গুণতে দারুণ লাগছে আমার, অন্তঃত একঘেয়েমি আসেনি এখনও, সয়ে গেছে মন। ওপাশের কণ্ঠস্বর শোনার অধীর আগ্রহ আমার বয়সটাকে সামনের দিকে এগোতে দেয় না, উল্টোদিকে ঘুরাতে চায়,সেই প্রথম দেখার দিনগুলিতে ফিরিয়ে নিতে চায়। অনুভূতিগুলো কুড়োয়ে আমিও দিব্যি আছি।

তুমিই বরং অপেক্ষায় থেকো, আমার মতো করে ডাকবাক্স হাতড়ে নেওয়ার অভ্যেসটা গড়ে নিও।

তোমার,

চন্দ্রবিন্দুর টিপ