0

ঈর্ষা 

Share

তুষার আবদুল্লাহ

এতো অগোছালো কেন? প্রশ্নটা সকলের। আমি কাউকেই উত্তর দেই না । কাঠের কারুকাজের মতো একেকবার, ঠোঁটে মুখে একেক রকম হাসি। এতে প্রশ্নকর্তাদের  কেউ কেউ তাচ্ছিল্য , উন্নাসিকতা খুঁজে পান । কেউ খুঁজে পান অহং। এ নিয়ে আমি তেমন ভাবি না । সেই স্কুলে পড়ার কালে এক বন্ধু বলেছিল, কাউকে দেখে তোর বদলে যাওয়ার দরকার নেই । কর্মজীবনেও একাধিক সহকর্মী বলেছেন পাল্টে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এমন অগোছালোই থাকুন । 

আমি নিজেকে বদলাইনি মোটেও । হাসিটুকুও নয়। বদলাবো কেন ? আমাকে যারা অগোছালো রাখেন, তারাতো আমাকে ছাড়েনি । আঁকড়ে আছে। বরং আলিঙ্গনের বাহু বাড়ছে দিনকে দিন । মায়ের বাহুডোরে ছিলাম মুক্তোর মতো । মায়ের চোখের পলক কখনো পড়তে দেখিনি, অপলক নজর ছিলো আমার দিকে । যেন আমি না হারাই । যেন আমাকে নিয়ে কেউ না পালায়। নিজেকে যে বয়সে গুছিয়ে নেয় সকলে। সময়ে সময়ে বদল করে । আমার সেভাবে গুছিয়ে উঠা হয়নি। কারন আমি পুরোটাই  মায়ের বাহুডোরে বন্দি ছিলাম । কিন্তু মাকে আমি আঁকড়ে ধরে রাখতে পারিনি ।

সবাই ভাবলো আমি এবার মুক্ত । পোড় খেয়ে মুক্ত হবো নিজের মতো করে । কিন্তু পরাধীনতাই আমার ললাটের স্থায়ী লিখন । নিজেতো মুছতে পারিনি। অন্য কেউ এসেও মুছে দিলো না । বরং কিছু বাহু  এসে আরো দৃঢ় ভাবে আটকে নিলো। বোনের রাজত্বে থাকতেই প্রথমে বন্ধু , পরে জীবন সহচর হিসেবে যিনি এলেন, তিনিতো মায়ের শূন্যতার বারো আনা শূণ্য করে দিলেন ।

 আমি যেন আরো অগোছালো হলাম। কন্যা এসে দখল নিলো কিছুটা । আরো দখলদার বাড়তে থাকে। তবে কন্যা ও জীবন সহচর ছাড়াও শ্যালিকাদের উজীরপনা আছে । তাদের শাসনেও মাথা নুইয়ে রাখতে হয় । প্রজা হিসেবে মন্দ নেই আমি । অন্যের হাতে যাপন দিয়ে বেশ আছি । নারীর অধীনে থাকাকে কাপুরুষ বলেন কেউ কেউ। আমার কানেও পৌঁছে এমন সম্ভাষণ । আমি হাসি । জানি এ তাদের ভালোবাসা না পাওয়ার ঈর্ষা ।

তুষার আবদুল্লাহ, গণমাধ্যমকর্মী