0

বাচ্চার রাগ নিয়ন্ত্রণ

Share

কাজী শবনম

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছেন বা কোথাও বেড়াতে গেছেন। হঠাৎ দেখলেন কোনো বাচ্চা মায়ের চুল মুঠ করে ধরে টানছে  বা মাকে থাপ্পড় দিচ্ছে, কামড় দিচ্ছে, হাতের খেলনা দিয়ে মাকে বাড়ি দিচ্ছে। এটাকে বাচ্চার স্বাভাবিক আচরণ ভাবার কোনো কারণ নেই, যদি বাচ্চার বয়স দুই বছরের উপরে হয়। দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চা গ্রিপ মজবুত করতে অনেক সময় চুল মুঠ করে ধরে; মাকে ব্যথা দেয়ার জন্য না। অনেক সময় মাকে আদর করতে গিয়ে ধারালো নখে আঁচড় লেগে যায়। নতুন দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে যন্ত্রণা হচ্ছে, তাই কামড় দেয়। এগুলো সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু একটা চার-পাঁচ বছর বয়সী স্কুলগামী বাচ্চা যদি এমনটা করে আর আপনি যদি ভাবেন বাচ্চা মানুষ, বুঝে না, বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে, তাহলে অনেক বড় ভুল করবেন। এটা ঠিক তো হবেই না বরং বাড়বে বহুগুণ।

বাচ্চার রাগের প্যাটার্ণ অবজার্ভ করুন। কাউকে মারার সময় বা জিনিসপত্র ভাঙ্গার সময় তার মুখের অভিব্যক্তি এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অবজার্ভ করুন। খেয়াল করে দেখুন, বাচ্চা বাবা, ভাই-বোন,খেলার সাথী বা বাসার সহকারীকে মারার সময় ক্রোধ তার চোখে মুখে প্রকাশ পায় কিনা। মারার পর আনন্দে হাসে কিনা। একটা চার-পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চা রাগ ওঠলে জিনিসপত্র ছুড়ে মারার সময় ক্রোধে তার চোখ ঠিকরে বের হয়ে আসতে চায় কিনা। কাউকে হাতের খেলনা দিয়ে বাড়ি দিয়ে সে আনন্দে হাসতে থাকে কিনা। রাস্তায় কুকুর বেড়াল দেখলে ঢিল ছুড়ে মারে কিনা। অযথা গাছের পাতা ছিড়ে কুঁচিকুঁচি করে আনন্দ পায় কিনা। স্কুল থেকে আসা কমপ্লেইন গুলোর প্যাটার্ণ লক্ষ্য করুন।

সেই মিথ আর এখন নাই যে ইগনোর করলে বাচ্চা একা একা ঠিক হয়ে যায় বরং অবস্থা আরও খারাপ হয়। বাচ্চাকে ক্লোজলি অবজার্ভ করুন। রাগের প্যাটার্ণ বুঝার চেষ্টা করুন। কোন কোন বিষয়ে বাচ্চা রাগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়, নোট ডাউন করুন। (রাগ যদি জেনেটিক্যাল হয়, তাও এর নিরাময় সম্ভব)। রাগ ওঠার আগেই বাচ্চার মাইন্ড ডাইভার্ট করা যায় কিনা চেষ্টা করে দেখুন। হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন টপিকে কথা বলে বা ওকে এমন একটা প্রশ্ন করে, যার উত্তর দিতে ওর কয়েক সেকেন্ড ভাবতে হবে, ব্রেইনকে অন্যদিকে কাজে লাগাতে হবে। 

অথবা তাকে বলতে পারেন, আমি বুঝতে পেরছি, তোমার রাগ হয়েছে, তোমার রাগটা কেমন আমাকে ছবি এঁকে দেখাও তো। হ্যাপী, স্যাড, ক্রাই, এংগরি এরকম  বিভিন্ন ইমোশনাল স্ট্যাট এর ছবি এঁকে একটা ফিলিংস চার্ট তৈরি করে দেয়ালে টানানো যায়। বাচ্চার সাথে একটা বোঝাপড়া হবে  এরকম যে, যখন তোমার রাগ লাগবে তুমি আমাকে দেয়ালের ফিলিংস চার্ট থেকে এংগরি চার্ট টা দেখাবে, আমি বুঝে নিবো। তরপর মাম্মী- কিড টাইম।  তুমি আমাকে বলবে তোমার কেনো রাগ হয়েছে। আমরা দুজন মিলে বের করার চেষ্টা করবো কি করলে রাগ থেকে মুক্ত  থাকা যায়।  সবার প্রথমে তুমি তোমার হাতের মুঠ খুলে ফেলো, বড় করে টেনে নি:শ্বাস নাও। তারপর আমাকে বল কেনো তোমার রাগ হয়েছে। দেখি দুজন মিলে হেল্প করতে পারি কিনা। বাচ্চাকে এই নিশ্চয়তা  টা দিতে হবে, আপনি আছেন তার পাশে এবং তাকে হেল্প করতে চান, আপনি তাকে অনেক ভালোবাসেন।

এসব চেষ্টা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের। অনেক সময় বাচ্চার রাগ লিমিট ছাড়িয়ে যায়। সেক্ষত্রে প্রফেশনাল হেল্প মাস্ট। আমাদের সমাজে এখনও আমরা কাউন্সিলিং নিতে অভ্যস্ত হইনি। কিন্তু বাচ্চার ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাওয়া ঠেকাতে হলে প্রফেশনাল চাইল্ড সাইকোলজিস্টের হেল্প লাগবেই। ধৈর্য্য ধরে সেশনগুলো নিতে হবে এবং তা এপ্লাই করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আজ যে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চা মা কে মেরে, মা কে ব্যথা দিয়ে আনন্দ পাচ্ছে; প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে সে বউকে অশুরের মতন পিটিয়ে চেয়ারে বসে পা দুলাতে দুলাতে আনন্দ নিতে পারে। শৈশবে কাউন্সিলিং, মনিটরিং এবং সাহায্য করলে হয়তো একজন রাগী বাচ্চা তার আচরণ ম্যানেজ করতে শিখে যাবে; আরেকজন রাগী পুরুষ তৈরী হবে না।

আর্লি চাইল্ডহুড একজন শিশুর মানসিক ভীত তৈরীর সময়। তাই শিশুর  আর্লি চাইল্ডহুড এ মনোনিবেশ করুন।

কাজী শবনম, আরলি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট আর্টিকেল রাইটার