0

বাচ্চার আচরণগত নিয়ন্ত্রণ শেখাতে আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

Share

কাজী শবনম

” ইটস ওকে; দ্যাট ওয়াজ এন একসিডেন্ট” মায়ের মুখ থেকে নরম সুরে এমন কথা শুনে একজন শিশু কতটা স্বস্তি পেতে পারে চিন্তা করা যায়! ধরেন বাচ্চার হাত থেকে কাঁচের গ্লাস পরে ভেঙ্গে গেলো। আপনি যদি ধমক দেন বাচ্চা ভয় পাবে, উদ্বেগ তৈরী হবে, এক সময় সে মিথ্যা বলা শুরু করবে। আর যদি আপনি রেগে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় তাকে বলেন, ‘ঠিক আছে এমনটা তো হতেই পারে’ বাচ্চা আপনাকে তার আপনজন ভাবতে শুরু করবে। সে ভাববে আপনাকে সত্যি বলা যায়; আপনি তাকে বুঝতে পারেন। এই নিরাপদ আশ্রয়টুকু বাবা মা এবং বাচ্চার মধ্যেকার সম্পর্ককে অনেক ফ্রেন্ডলি করবে। 

এই প্র্যাকটিস আমি নিজে করেছি আমার বাচ্চাদের সাথে। এখন আমার হাত থেকে কাঁচের জিনিস পড়ে ভেঙ্গে গেলে, আমার বাচ্চারা দৌড়ে এসে বলে, “ঠিক আছে মা এটা একটা এক্সিডেন্ট”. আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। ওরা ছোটবেলায় কোনোকিছু নিয়ে আপসেট হলে, ভয় পেলে আমি যেভাব ওদের বুঝাতাম, “মা আছি ওদের পাশে”। এখন ওরা আমাকে আপসেট দেখলে জড়িয়ে ধরে বলে, “চিন্তা করোনা মা, সুসময় অবশ্যই আসবে, আমরা আছিতো তোমার পাশে।”

সেলফ রেগুলেশান বলতে বুঝায়, পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের ইমোশান এবং বিহেভিয়্যার ম্যানেজ করতে পারার দক্ষতাকে। একটা দুই বছরের শিশুর অস্থিরতা যেই লেভেল পর্যন্ত নরমাল হিসাবে নেয়া যায়, পাঁচ বছরের স্কুলগামী বাচ্চার সেই একইরকম উদ্বেগ বা অস্থিরতা থাকা মানে তার হেল্প দরকার, সে একা পারছে না। এজন্যই বলে ‘সেলফ রেগুলেশান কাম’স ফ্রম কো-রেগুলেশান’ ছোট বাচ্চারা বিভিন্ন সিচুয়েশনে তাদের ইমোশান, বিহেভিয়্যার একা একা কন্ট্রোল করতে পারে না। বাবা-মা এবং শিক্ষকদের হেল্প দরকার হয়। এছাড়াও বড়রা কিভাবে সেলফ রেগুলেশান করে তা দেখেও বাচ্চারা শিখে।

সেলফ রেগুলেশান স্কিল, একাডেমিক ও স্যোশাল স্কিল এর মতন শেখার বিষয়। এ জন্য বাবা মা এবং শিক্ষককে ‘সাপোর্টিভ ফ্রেমওয়ার্ক’ এর মাধ্যমে ধৈর্য্যের সাথে এগোতে হয়। এই এপ্রোচকে বলে scaffolding. এতে একটা একটা করে ছোট লক্ষ্য সেট করে আগাতে হয়। ইমোশান এবং বিহেভিয়্যার ম্যানেজমেন্ট এর এক ধাপ এগোলে, পরের ধাপে যাওয়া। যেমন, কোনো শিশুর সাথে রোজ সকালে টুথব্রাশ করা নিয়ে স্ট্রাগল করতে হয়। বাবা মা যদি ‘scaffolding approach’ এর মাধ্যমে এভাবে আগায় যে প্রথম কিছুদিন বাচ্চা শুধু টুথব্রাশে পেস্ট লাগাবে, ব্যাস, ব্রাশ করতে হবে না। কিছুদিন পর এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, বাচ্চা অল্প ব্রাশ করলো। তারপর প্রোপার ওয়েতে ব্রাশ করলো। এভাবে ধাপে ধাপে আগানো।

আবার ধরুন, কোনো শিশু সকালে কিছুতেই ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যেতে চায় না। রোজ কান্না কাটি করে। বাচ্চার সাথে স্ট্রাগল করতে করতে বাবা মা টায়ার্ড।. সেক্ষেত্রে এই উপায়ে প্রথমে কিছুদিন বাচ্চা শুধু রেডী হবে, স্কুলে যাওয়া লাগবে না। তারপর বাড়ির বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে চলে আসলো। আস্তে আস্তে সে রেডী হয়ে স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত অভ্যস্ত হবে। অনেক বাচ্চা থাকে খুব অল্প খায়। আবার কোন বাচ্চা নির্দিষ্ট একটা কিছুই খাবে। এক্ষেত্রে নতুন খাবারে তাকে পরিচিত করে তুলতেও উপরের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। যেমন ধরেন অনেক বাচ্চা ফল খেতে চায় না। তাকে একটা আপেল ৪-৬ মাস চেষ্টা করে খাওয়া শেখানো যেতে পারে। ‘Scaffolding approach’ এ প্রথমে কিছুদিন আপেলটা শুধু হাতে ধরিয়ে দিতে হবে, খেতে বলার দরকার নেই। তারপর একটু মুখে টাচ করবে, তারপর হালকা করে একটা কামড় দিতে শিখবে এবং ফাইনালি একসময় খাওয়া শিখে যাবে। 

উপরের কথাগুলো বইয়ের তত্ত্ব কথা ভাবার কোনো কারন নেই। এগুলো আমি প্র্যাকটিস করেছি আমার বাচ্চাদের এবং ছাত্রদের সাথে। সেই মিথ এখন আর নেই যে বাচ্চা মুখ ভারী করে থাকলে তাকে ইগনোর করলেই সে পাত্তা না পেয়ে একা একা ঠিক হয়ে যাবে। না হবে না। সে আরো জেদী হবে, একরোখা হবে, মানসিকভাবে অপরিপক্ক শিশুতে পরিণত হবে। তখন সে কাউকে আঘাত করতে শিখবে, মিথ্যা বলা শুরু করতে পারে, এমনকি চুরি করতে পারে বন্ধুদের পেন্সিল, সার্পনার পর্যন্ত! 

সুতরাং বাচ্চাদের ব্যবহার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং বাচ্চার যদি মানসিক এবং আচরণগত ইস্যুতে হেল্প দরকার হয়, ধৈর্য্যের সাথে হেল্প করতে হবে ছোট ছোট গোল সেট করে। বাচ্চাকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, সে একা না। তার যে কোন সমস্যার সাথে আপনি আছেন পাশে। এভাবে কো-রেগুলেশান থেকেই সেলফ রেগুলেশান আসবে।

কাজী শবনম, আরলি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট আর্টিকেল রাইটার