কাজী শবনম
“তুমি এটা কেনো করেছো? বলো, জবাব দাও। বলো, আর করবে কখনো? বলো, জবাব দাও।” হাত জোর করে অনুরোধ করছি বাবা মায়েদেরকে, এই প্রশ্ন দু’টো বাচ্চাদের করবেন না। বাচ্চাদের মন ফুলের পাঁপড়ির মতন কোমল। এই harsh speech গুলো বাচ্চারা নিতে পারে না। ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যায়।
কেনো সে এমনটা করেছে, সেই কথাগুলো যে সে বড়দের মতন গুছিয়ে বলতে পারবে, এমনটা আশা করা উচিত না। কত বড় মানুষই তো পারে না। কত বাচ্চা আছে, এমনিতে খুব স্মার্ট। পটপট করে কথা বলে সব সময়। কিন্ত মন খারাপ হলে, ভয় পেলে, ভুল করলে, অভিমান করলে, সে আর কিছুতেই মনের কথাগুলো গুছিয়ে বা বুঝিয়ে বলতে পারে না। কেউ হয়তো টেবিলের নীচে বা দরজার পিছনে লুকিয়ে কাঁদে। হাজার জিজ্ঞেস করলেও বলে না (আসলে বলতে পারে না) যে সে কেনো কাঁদছে।
বাচ্চাদের এই melt down moment এ বাবা মায়ের একটিভ রোল প্লে করতে হবে। আপনার সন্তানকে আপনি সবচেয়ে ভালো বোঝেন, তার শিক্ষক বা খেলার সাথীদের চেয়ে। আপনার সন্তানের melt down pattern অবজার্ভ করুন এবং তার প্রতি empathetic হোন।
– সেই সময় তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবেন না।
– কেনো মনের কথা বলতে পারছে না, তার জন্য তাকে তিরস্কার করবেন না।
-তার কাছে জবাব নিবেন না।
-ভবিষ্যতে না করার জন্য ওয়াদা নিবেন না।
আপনার সন্তানের melt down moment এ যদি আপনি সেই প্রশ্ন দু’টো করেন বা তাকে তিরস্কার করেন, বকা দেন, তাহলে কি হবে জানেন?
১) বাচ্চা জেদী হবে।
২) বাচ্চা নিজেকে ঘৃনা করা শুরু করবে এই ভেবে যে “আমি কেনো এমন!”
৩) বাচ্চা মিথ্যা বলা শুরু করবে, বকা থেকে বাঁচার জন্য।
৪) বাচ্চার সাথে আপনার রিলেশন খারাপ হবে। বাচ্চা একটা নেগেটিভ ধারনা নিয়ে বড় হবে যে মা/বাবা আমাকে বোঝে না।
৫) বাচ্চার মধ্যে রুডনেস চলে আসবে।
আমার ছোট ছেলে ভীষন স্মার্ট। ওকে কথায় হারানো মুশকিল। কিন্তু ওর মন খারাপ হলে টেবিলের নীচে, দরজার পিছনে লুকিয়ে কাঁদতো। কোনে কাঁদতো সেই কারণ কান্না থামার পরও কোনোদিন বাবা/মা/শিক্ষক/বন্ধু/খালা/মামা কেউকে বলেনি।
যখন আমি ওর melt down pattern অবজার্ভ করলাম, ওকে বোঝার চেষ্টা করলাম, তারপর থেকে আর কখনো জিজ্ঞেস করিনি কেনো কাঁদছে। ঐ সময় ওকে কিছু সময় কাঁদতে দিয়ে (অবশ্যই পাশে থেকে) তারপর আমি অন্য কোনো একটা টপিকে গল্প শুরু করতাম। ও শুনতো, উত্তর দিতো না। আমিও ওর কাছ থেকে উত্তর নেওয়ানোর চেষ্টা করতাম না। কারণ আমি ওকে sooth করার চেষ্টা করছি; গল্পে ওকে এ্যাকটিভলি ইনভলভ করা আমার উদ্দেশ্য না। এক সময় কান্না থেমে আসতো। সম্ভব হলে একটু বারান্দা বা ছাদে হাঁটতে যেতাম যাতে অক্সিজেনের অভাবে প্যানিক এ্যাটাক না হয়।
এক সময় এই melt down এর ব্যাপারটা কমে বছরে দুই-এক বারে চলে আসলো। শুরু করলাম এডভান্সড লেভেলে কাজ।বাচ্চাকে সাথে নিয়ে yoga mat এ বসে Meditation with affirmation for panic attack, stress relief & concentration করা শুরু করলাম।
এর উপকারিতা বলে বোঝাতে পারবো না। ড্রামাটিক চেন্জ আসলো বাচ্চার মধ্যে।
– বাচ্চার frequently down হওয়া কমলো।
– বাচ্চার নিজের উপর কনফিডেন্স বাড়লো।
-বাচ্চার কনসেনট্রেশান বাড়লো। সব ক্ষেত্রেই; পড়াশুনা, বড়দের ইন্ট্রাকশান ফলো করা।
-বাচ্চার মধ্যে পজিটিভ এনার্জি আসলো meditation এর affirmation থেকে।
যেসব বাচ্চাদের frequently melt down হয়, সেসব বাচ্চারা নিজেরাই তো অনেক মনোঃকষ্টে আছে। তার কষ্ট আর বাড়িয়ে না দেই।তাকে কোনো প্রশ্ন না করি, জবাব না চাই। তখন আমি তাকে যা ই প্রশ্ন করি না কেনো, সে তখন আমাকে শুনতে পায় না। তার পাশে থাকি, আদর করি। তাকে ফীল করাই “আমি আছি তোমার পাশে”। এই melt down moment পার হয়ে যাক; কথা তো আজীবনই বলা যাবে।
কাজী শবনম, আরলি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট আর্টিকেল রাইটার