মনে আছে নিশ্চয়ই সেই পণ্ডিতমশাইয়ের কথা, যিনি কিনা স্কুল পরিদর্শনে বড় বাবু আসার সুবাধে একখানা গেঞ্জি গায়ে চাপিয়েই চুলকে চুলকে গা লাল করে ফেলেছিলেন! মনে থাক আর না থাক, বলছিলাম অফিসিয়াল আউটফিটের কথা কিংবা অফিসিয়াল লুক এর কথা। অফিস মানেই এমন জায়গা যেখানে আপনাকে কাজ করতে হয়। কিন্তু আধুনিক বিশ্বায়ন বলুন আর শিল্পের বিকাশই বলুন আমাদের অফিসিয়াল লুকেও কিন্তু ভিন্ন প্রভাব দেখতে পারা যায়। অফিসিয়াল লুকের নানা ধরনের বিবর্তিত রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিবর্তনের হাওয়ায় পাল উড়িয়ে অফিসিয়াল ফ্যাশনেও এসেছে নতুন নতুন মাত্রা। তবে সবকিছুতেই মানানসই বলে একটা বিষয় আছে। তাই অফিসিয়াল লুক এর ক্ষেত্রে আপনাকে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। হয়তো ছাত্র জীবনে আপনি এলোচুলে, স্যান্ডেল পরে বা রং চটা জিন্স পরে ক্লাসে গিয়েছেন। বন্ধুদের আড্ডায় টুপ করে মাটিতে বসে সাদা জামাটির বারোটা বাজিয়েছেন। তা বলে অফিসেও কিন্তু একই কাজ করবেন না। অফিস ম্যানারের একটা বিশাল পার্ট হচ্ছে অফিস ফ্যাশন বা অফিসিয়াল স্টাইল বজায় রাখা। একসময়ের উড়াধুরা ফ্যাশনের আপনি কিন্তু হয়ে উঠেছেন বড় মাপের কর্পোরেট অফিসার। তো সেক্ষেত্রে আপনার স্টাইলটা যে বদলে যাবে তা এতক্ষণে বুঝে গেছেন আশা করি।

পোশাক-আশাক
প্রথমেই শুরু করা যাক আপনার পোশাক-আশাক দিয়ে। এটা মনে করবেন না যে কর্পোরেট পারসন হয়ে গেছেন বলে আপনার কোনো শীত-গ্রীষ্ম নেই। কিংবা শুধু দামী পোশাকটাই পরতে হবে। ব্যাপার হলো আপনার অফিসের সাথে কোন পোশাকটা মানানসই তা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। খুব দামী স্যুট বা প্যান্ট পরলেই যে আপনাকে ভাল লাগবে তা কিন্তু নয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে পোশাকের ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মেয়েদের সব পোশাকেই ভাল লাগে। এক্ষেত্রে অফিসে আপনার অবস্থান ও সেই দিনের রুটিনে আপনার কাজের ধরন বুঝে নিয়ে পোশাক সিলেক্ট করতে হবে।
সাধারণত অফিস আউটফিটে আপনি প্রকৃতির অবস্থা বুঝে পরতে পারেন কুর্তি। আবার টি শার্ট কিংবা সাথে ইন করে প্যান্টও পরা যেতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন পোশাকটা আপনার ও আপনার পরিবেশের সাথে যাচ্ছে কি না। আবার বিশেষ প্রেজেন্টেশনে শাড়িও পরতে পারেন। কিন্তু অফিসের শাড়িটি যেন পার্টির শাড়ির মতো না হয়। কোনরকম চুমকি, পুতি ছাড়া সিম্পল ফ্লোরাল জর্জেট কিংবা হালকা তাঁতের শাড়ি বেশ মানিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যারা একটু স্লিম তারা সুতি বা তাঁতের শাড়ি পরতে পারেন। আর যাদের স্বাস্থ্য ভাল তাদের ফ্লোরাল প্রিন্টের জর্জেটেই বেশ মানাবে। সবকিছুর পরেও আপনার কমফোর্ট ও পার্সোনালিটির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনার পাশের জনকে যে পোশাকে ভাল লাগছে আপনাকেও তাতে ভাল নাও লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিত্বের ধরন বুঝে শাড়ি বা অন্য কোন পোশাক সিলেক্ট করত পারেন।

মেক-আপ
এসেছেন অফিসে কিন্তু দিয়ে এসেছেন পার্টি মেকআপ। এরচেয়ে অদ্ভুত আর কিছু হতে পারে না। তাই মেকআপ নিয়ে প্লিজ ভাবুন। কোনো দরকার নেই ভারি মেকআপের। জাস্ট হালকা টাচ-আপ করুন। এক্ষেত্রে হাতের কাছে ফাউন্ডেশন, কনসিলার, হাইলাইটারই যথেষ্ট। চোখের মেকআপের ক্ষেত্রে ভারি সাজ এড়িয়ে চলুন। সিম্পল কাজল কিংবা আইলাইনারেই স্নিগ্ধ আপনি, বিশ্বাস না হলে আয়নায় ভাল করে একটু নিজেকে দেখে নিন আরেকবার। আর আলাদা করে আই মেকআপ কিংবা চুমকি মেকআপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। চোখের ক্ষেত্রে যদি আপনি শ্যাড ব্যবহার করেন তা হতে হবে কাপড়ের আর চোখের সাথে মানানসই। এক্ষেত্রে শ্যাড ব্যবহার করলে চোখ যাতে বেশি স্মোকি হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। আইশ্যাড দিলে খুব বেশি মোটা কাজল ব্যবহারের দরকার নেই।
হেয়ার স্টাইল
নানা ধরনের হেয়ার স্টাইল এসেছে। তাই বলে অফিসে যা ইচ্ছে তাই হেয়ার স্টাইলের কিন্তু দরকার নেই। মেয়েদের চুলের ক্ষেত্রে অবশ্যই চুলগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে। চুলে উদ্ভট রং এড়িয়ে চলুন। লম্বা চুল হলে পনি টেইল করে বাঁধতে পারেন। পোশাকের সাথে চুলের সামঞ্জস্য রাখবেন। লম্বা চুল হলে সাধারণ কুর্তি, লেগিংসের সাথে মাথার সামনে দিকে এলসা স্টাইলে চুল বাঁধতে পারেন। আবার চুল ছোট হলে খোলা রাখতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন তা যেন কাজে মনোযোগ বিঘ্ন না ঘটায়। কখনো কখনো হাত খোঁপাও করতে পারেন। কিন্তু তা শাড়ির সাথে করলে ভাল লাগবে।

পরিচ্ছন্নতা
অফিসিয়াল লুকে পরিচ্ছন্নতা খুব জরুরি। কেননা এতে আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। তাই যে পোশাকই পরুন না কেন তা যেন হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। খেয়াল রাখবেন মুখে যেন কিছু লেগে না থাকে। খাবার হাত দিয়ে খেলে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করবেন। হাত-পায়ের নখ ছোট রাখবেন। যাদের নখ বড় তাদের নখের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু করবেন। যারা বেশি ঘামেন তারা অবশ্যই ডিওডরেন্ট ব্যবহারের প্রতি যত্নশীল হবেন।

এক্সেসরিজ
হাতের চুড়ি, নাকের ফুল, কানে দুল বা ব্রেসলেট কিংবা হ্যান্ডব্যাগটি কিন্তু মানানসই হওয়া চাই। খুব দামী হতে হবে এমন নয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে তার উপযোগিতা কতখানি। অফিসিয়াল হ্যান্ডব্যাগটি যেন হালকা রংয়ের হয়। আর মেয়েদের আয়তাকার লেদারের বা র্যাক্সিনের ঘড়ি ভাল মানাবে। কর্পোরেট সেক্টরে বর্তমানে পোশাকের বিবর্তনে নানা ধরন দেখা যায়। খুব বেশি ফরমালিটিজ না থাকলে খুব বেশি ইনফরমাল হওয়ার সুযোগও কিন্তু নেই। তাই অফিস আওয়ারের লুকে থাকুক পুরোদস্তর অফিসিয়ালিটি। আর হ্যাঁ পারলে সংগ্রহে রাখুন বেশ কিছু এক রঙা পোশাক এবং পাশাপাশি সুতি পোশাক। তাহলে নিত্যকার পোশাক বাছাই থেকে মুক্তি পাবেন। আর আপনার আপনার ওয়ারড্রোবে নতুন কিছু যোগ করতে চাইলে ফ্যাশন হাউজগুলোর হালচাল একটু দেখে আসতে পারেন।
ছবির মডেল: সাবিহা নিগার দৃষ্টি
(রোকেয়ানামা ডেস্ক)