0

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন কি করে

Share

নিশাত শারমিন নিশি

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আসলে কি? এ বিষয়টা নিয়ে বিশেষ করে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা  জোরেশোরে আলোচনা করতে  শুরু করেছি বা আমাদের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে এ নিয়ে। কিন্তু এই সচেতনতাটা তৈরি হওয়া উচিত একেবারেই একটা বাচ্চা যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন থেকেই। 

একটা বাচ্চা যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন যদি বা জন্মের পরপর যদি বাচ্চাটা ঠিকমতো নারিশ থাকে তবে সেই বাচ্চার বড় হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে বেশি। তাই একটি বাচ্চার জন্মের পর প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত তাকে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংয়ে রাখুন। এর মাধ্যমে একটি বাচ্চার যে এন্টিবায়োটিক ক্ষমতা তৈরি হবে তা সারাজীবন একটি বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে বা অন্যদের চেয়ে বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে তার মধ্যে ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে আমরা বড়রা কি করব?  বড়দের কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় নেই? অবশ্যই আছে। যারা এরই মধ্যে কোন জটিল অসুখ  বাধিয়ে ফেলেছেন তাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা একজন সুস্থ মানুষের চাইতে কম থাকে । তাই বড়রা যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান তাদের  প্রথমেই দেখতে হবে ডায়বেটিস, হার্ট ডিজিজসহ অন্য কোন রোগ আছে কিনা। যদি আপনি সুস্থ থাকেন তাহলে এখন থেকেই আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে। 

সেটা কিভাবে?

ওজন ঠিক রাখা

প্রথমেই এজন্য আমাদের ওজনটা ঠিক রাখতে হবে। আপনি যদি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরের সব জায়গার ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারেন তবে কোন অসুখ বিসুখ সহজে আপনাকে কাবু করতে পারবেনা, আপনি সুস্থ থাকবেন। 

কি খাবেন

আমাদের সামনে  এখন খাবারের অনেক অপশন আছে। সময়ের স্বল্পতার জন্য আমরা অনেকেই বাজারের প্রসেস ফুড খেয়ে থাকি নিয়মিত। নিয়মিত খাচ্ছি মেয়োনেজ, চিজ, ঘি, তেলে ভাজা  নানা মুখরোচক খাবার। আর ঘরে বসেই এখন অর্ডার দিতেই হাতে পৌছে যাচ্ছে বার্গার, পিৎজা এসব কিছুই। 

কিন্তু বাঁচতে হলে এই খাবারগুলো আমাদের এভয়েড করতে হবে।  যদি আমরা এসব খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি তবে আমাদের শরীরে একসময় পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিবে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই।  

এ জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের দিকে মনোযোগী হতে হবে। আমাদের শরীরে শ্বেত রক্ত কনিকা নামে একটি কনিকা থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই শ্বেত রক্ত কনিকা তৈরিতে প্রোটিনজাতীয় খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

এজন্য খাদ্য তালিকায় নিয়মিত  রাখতে পারেন  চিকেন, ফিশ এবং ডিম। ডিম একটি আদর্শ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি ডিম অবশ্যই রাখবেন। যদি আপনার অন্য কোন অসুখের কারণে ডিম খাওয়া নিষেধ থাকে তবে কুসুম ছাড়া ডিম আপনি খেতেই পারেন।

আমরা সবাই প্রতিদিন মাছ মাংস জাতীয়  খাবার এফোর্ট করতে পারিনা তারা তাহলে কি করবেন প্রশ্নটি চলেই আসে। তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে, আপনি ডালের মধ্য প্রচুর প্রোটিন পাবেন। ডাল একটা সুপার ফুড। ডাল দিয়ে একটা খিচুড়ি বানিয়ে খেতে পারেন। এভাবে আজ একরকম কাল অন্যরকম করে খেলে খাবারে একঘেয়েমিও আসবেনা।

করোনার সময় আমরা কি দেখেছি, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তাদের করোনা কম কাবু করতে পেরেছে বা তারা মারা কম গেছেন। এগুলো আমরা বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখতে পেয়েছি। তাই এখন থেকেই আমাদের খাবারের দিকে সতর্ক হতে হবে। একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর ভাগ করে খাবারটা খেতে হবে। 

একসাথে অনেক খাবার খেলে একটার পুষ্টিগুণ অন্যটা নষ্ট করে দেয়। যার ফলে দেখা যায়, অনেকে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এছাড়াও আমাদের জিংক জাতীয় খাবারের দিকেও নজর দিতে হবে শ্বেত কনিকা তৈরিতে।

আমাদের দেশের খাবার তুলনামূলক অন্য দেশের চাইতে আদর্শ। কারণ খাবারে আমরা যে মশলা ব্যবহার করি তা শরীরের জন্য অনেক ভাল। কিন্তু রান্নার পদ্ধতির কারণে আমাদের মশলার যে গুণাগুণ  তা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা মশলাটাকে পুড়িয়ে ফেলি। তাই আপনার দৈনন্দিন রান্নাবান্নাতেও একটু পরিবর্তন নিয়ে আসুন। আপনার একটু সচেতনতাই আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে বহুগুণ। 

নিশাত শারমিন নিশি,পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান (পপুলার মেডিকেল কলেজ হসপিটাল)