0

পাল্টে যাওয়া জীবন (পর্ব – ২)

Share

জাহান-ই-গুলশান

গত দুই বছর আগে আমি ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হই। এর আগের জীবনটা ছিল আমার একেবারেই অন্যরকম। আমি ঘুণাক্ষরেও কখনো ভাবিনি আমার শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধতে পারে । যে রোগটির কারণে অধিকাংশ মানুষকেই হেরে যেতে হয় মৃত্যুর কাছে। অদম্য মানসিক শক্তি, সময়মতো চিকিৎসা, সার্বক্ষণিক ডাক্তারের পর্যবেক্ষণ এবং সকলের সহযোগিতায় আজ আমি অনেকটাই ক্যান্সারকে জয় করার পথে। আমি চাই  ওভারিয়ান ক্যান্সার নিয়ে যেন নারীদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হয়। সে উদ্দ্যেশেই আমার ক্যান্সারে আক্রান্ত, চিকিৎসা এবং এর পরের বিষয়গুলো রোকেয়ানামার পাঠকদের সাথে শেয়ার করছি ধারবাহিকভাবে। আমার অভিজ্ঞতা যদি কারো প্রয়োজনে আসে তাই এই ছোট্ট প্রয়াস।  আজ রয়েছে এর দ্বিতীয় পর্ব। যারা জানতে আগ্রহী এবং আগের পর্বটি পড়েন নি তাদেরকে অনুরোধ করব প্রথম পর্বটি পড়ে নেয়ার জন্য। 

 ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনটি বিষয় আমি শিক্ষা পেলাম, যেগুলো  মোটেও অবহেলা করা যাবে না।  

ক) শরীরের কোথাও সিস্ট হলে অবহেলা না করে সতর্ক হোন

খ) ক্যান্সার মার্কার চেক করুন

গ) ক্যান্সারের সার্জারি ও সাধারণ সার্জারির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

আমার সার্জারির আগে বাংলাদেশে আমার ডাক্তার ছাড়াও  জনা তিনেক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেছি, দেখিয়েছি। কিন্তু কেউই ক্যান্সারের ব্যাপারটা তাদের ভাবনায় আনেন নি। অন্তত আমাদেরকে কিছুই বলেন নি এমনকি কোনরকমের আভাসও পাইনি। ১১ ও ১৭ ইঞ্চি সিস্টের সাইজ জানার পরও কেন তাঁরা ক্যান্সারের ব্যাপারে ভাবেন নি সে বিষয়টি আজও আমার বোধগম্য নয়। কিন্তু এরই মধ্যে যা ক্ষতি হওয়ার আমার তা হয়ে গেছে। 

দেশে ডাক্তাররা কোন ক্যান্সার মার্কার টেস্ট করাতে দেন নি। সার্জারির আগের দিন করা এমআরআই রিপোর্টেও সুস্পষ্ট ছিল না বরং কিছুটা ইঙ্গিত ছিল। যা আমরা পরে বুঝেছি। আমার সার্জারিটা সার্জন সাধারণভাবেই শুরু করেন।

এখন বুঝতে পারি ক্যান্সার সার্জারির সাথে সাধারণ সার্জারির বিস্তর ফারাক আছে। সেটাও জেনেছি ঠেকে-ঠেকে, দিল্লীর টাটা হসপিটালে গিয়ে। সেখানে যাওয়ার পর ডাক্তার আমাকে দেখে জানালেন, দেশে আমার যে সার্জারি হয়েছে তা ইনকমপ্লিট অবস্থায় রয়ে গেছে এবং এতে ক্যান্সার  রোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় সফলতার পার্থক্য হয় সার্জারির দক্ষতা ও সঠিকতার ওপর। তাই ক্যান্সার আক্রান্ত হলে কোথায়,কিভাবে সার্জারি করবেন,সে বিষয় খুব জেনে,বুঝে,সতর্কতার সাথে সিন্ধান্ত নিবেন। যেটা আমার প্রথমে বুঝতে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। 

এরপর আমি কিভাবে এমন পরিস্থিতি থেকে একটা সুস্থ ও স্বাভাবিক পর্যায়ে অআসতে পেরেছি ধীরে ধীরে তা পরবর্তী পর্বগুলোতে সব তুলে ধরা হবে। ভাল থাকবেন সবাই এবং সবার আগে নিজের যত্ন নিবেন, নিজেকে ভালবাসবেন। 

জাহান-ই-গুলশান, ক্যান্সার সারভাইভার