1

নারীর সতীত্বের সনদ ‘সতীচ্ছিদ্র’ মিথ

Share

ডা. ছাবিকুন নাহার

উম…ম… কিভাবে যে শুরু করি। ব্যাপারটা এমন যে, এসব নিয়ে আমরা সাধারণত কথা বলতে চাই না। এ ব্যাপারে কথা না বলাই যেনো সভ্যতা ভব্যতা। অবশ্য মনেমনে হয়তো অনেকেই জানতে চাই। জানাটা ভীষণ দরকারি।

যা হোক বলছিলাম হাইমেন বা সতীচ্ছিদ্রের কথা। কোথাও কোথাও একে বলে সতী পর্দা। নামটার মধ্যেই কেমন যেনো একটা বেঁধে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করার গল্প আছ। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়। আমি অবশ্য বলি ঠকানোর গল্প। 

নারীর ভ্যাজাইনাল ইনট্রয়টাস বা যোনীমুখে একটা স্বচ্ছ আবরণ থাকে। তাকেই এই জিনিস বলা হয়।

আমার ইংরেজি প্রীতি নেই বললেই চলে। ঠেকায় না পড়লে বাংলা ছাড়া নড়ি না। তবে একটা ব্যাপার স্বীকার করতেই হয়, অনেক নিষিদ্ধ গন্ধমাখা কথাও ইংরেজিতে ওরা অবলীলায় বলে দেয়। একটুও অন্যরকম লাগেনা শুনতে। হাইমেন অন্য আট দশটা কথার মতোই। কিন্তু সতীপর্দা….হায় হায়! এই মেয়ের মুখে কিছু আঁটকায় না। সো এই লেখায় হাইমেন কথাটা হয়তো বেশি আসবে। শত হলেও আমিও একই জল হাওয়ায় বসবাস করি। 

যুগে যুগে নারীকে এই এক পর্দা / হাইমেন দিয়ে এমন টাইট দেয়া হয়েছে যে, মন দিয়ে অনুভব করলে স্রেফ আঁতকে ওঠবেন। এই হাইমেনকে নারীর সতীত্বের সনদ ধরা হয়। যার আছে সে ভার্জিন বা সতী। যার নেই সে যে কী…? মর্ত্যের দোজখের লাকড়ি। যাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভার্জিনিটির মিথ ছড়ানো হয়। নাকী…আমার ভাষায় কুলায় না, আপনারা ধরে নিন আর নারী হলে মিলিয়ে।

এই মিথ কত নারীকে যে দুনিয়ার নরকে নিক্ষেপ করেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। সীতাকে আগুন পরীক্ষা দিতে হয়ছিল বলে শুনেছি। আর রামকে? ধুরর…ওদিকে যাচ্ছি কেন!!!

এখন আসেন জেনে নি এই জিনিস আসলে কী?

প্রত্যেক নারীর যোনী পথের শুরুতে একটা খুবই পাতলা স্বচ্ছ পর্দা থাকে। যা হাইমেন নামে পরিচিত। বাংলায় কি বলে তা আপনারা জানেন। আরো জানেন যে ফার্স্ট মেটিং এ এই মনোরম আবরণ ছিড়ে যায় এবং কিছুটা ব্লিডিং হয়।

– ব্লিডিং হয়েছে? বেঁচে গেছো নারী। তুমি ভার্জিন।

– ব্লিডিং হয় নি? হবে ক্যামনে, তুমি তো অ…স…

থামেন থামেন বিজ্ঞজন। একটু শুনেন। তারপর না হয় বলবেন। বিবেচনা আপনার….

এই হাইমেন অনেক ধরনের হয়। যেমন-

* লুনাটিক (পঞ্চমীর চাঁদের মতো,হলো না – কাস্তের মতো), 

* অনেক গুলো ছিদ্রযুক্ত,

* লুজ,

* টাফ 

* এবং কখনো কখনো এবসেন্ট। এমনি এমনি।

আবার কখনো কখনো পুরোটাই বন্ধ। বন্ধ মানে বন্ধ। নো এন্ট্রি, নো এক্সিট। নো মেন্সট্রুয়েশান, নো মেটিং।

যা বলছিলাম, এই হাইমেন এতই সংবেদনশীল যে এটা ছিড়ে যায়। তার এই ছিড়ে যাওয়াটাই নিয়তি। যেমন, কবির ‘এই পথ চলাতেই আনন্দ’।

কি কারণে ছিড়ে যায় তা পৃথিবীর সবাই জানে। না জানা কারণগুলো হলো-

 * দৌড় ঝাঁপ

 * গাছে চড়া

 * বাই সাইকেল চালানো

 * শিশুরা কৌতুহল প্রবন হয়ে নিজের প্রাইভেট পার্টসে ফিংগার, পেন্সিল, অন্যান্য ফরেন বডি ঢুকায়,ফলাফল… 

পেন্সিল সবচেয়ে বেশি দায়ী। যাবেন কই, মাফ নাই। পেন্সিল বেশি  সহজলভ্য শিশুদের কাছে। বুঝা গেল ব্যাপারটা!!!

মজার ব্যাপার কি জানেন? এমনও আছে, কোন কোন নারীর পাঁচ সাতটা বাচ্চা, ভ্যাজাইনাল ডেলিভারী অথচ হাইমেন বহাল তবিয়াতে বসে আছে!!! আবার এমন ও আছে….. বলে লাভ নেই। সে গল্প আপনারা জানেন।

শেষ করছি একটা গল্প দিয়ে- 

উথাল পাতাল সুন্দরী এক রাজকন্যা। বিয়ে হলো এক রাজপুত্রের সাথে। তাদের বাসর।

রাজার অস্থির পায়চারী। হাতে তলোয়াড়। 

– মেয়ে তার মুখে চুনকালী মাখাবে না তো? 

– মেয়ের সতীত্ব আছে তো?

–  রক্তমাখা রুমাল এখনো খিড়কী দিয়ে ছুড়ে মারছে না কেন? 

– সবাই অপেক্ষা করছে। এই লাল রক্ত তো আমার মান সম্মান, অহংকার, সব। সব বুঝি গেল। 

– তবে কী….না আমি ভাবতে পারছি না।

– আমার এই হাত দিয়ে আমার কন্যাকে খুন করব! 

–  আমি!!! বড় একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন রাজা।

–  আমি রাজা। সম্মান রক্ষার্থে আমি সব করতে পারি।

হায় সম্মান! তুমি এত মামুলি! যোনীতে থাকো!!! অস্ফুট স্বরে রাজা ঠিকই বললেন নিজেকে নিজে।

ওদিকে রাজপুত্র গ্যাচাং করে কনিষ্ঠ আংগুল কাটল। ভালো করে রক্ত মাখাল। ছুড়ে দিল রাজার মুখে। একসাথে সমস্ত বাদ্য যন্ত্র বেজে ওঠল। সম্মানের বাজনা নাকি অসম্মানের? আমরা সেদিকে যাব না।

আমরা বরং বাসরে ফিরে আসি। শুনি তাদের কথোপকথন-

– তুমি কেন এমনটা করলে? ইশ, হাত কেঁটে গেছে কতটা।

– শোন মেয়ে বিয়ে মানে একতাল মাংস নিয়ে হামলে পড়া নয়। আরো অনেক কিছু। 

– না মানে আমি তো ভার্জিনই। ব্লিডিং হতেও পারত…

রাজপুত্র কথা শেষ করতে দেয় না। বুকের মাঝে চেপে ধরে আর ফিসফিস করে বল,

– বোকা মেয়ে, ভার্জিনিটি হাইমেনে থাকে না।

এইসব সব বানানো। দখলে রাখবার,দমিয়ে রাখবার কৌশল। আমি তোমাকে দখল করতে চাইনে। ভালোবাসতে চাই। আর ভালোবাসায় সব শুদ্ধ।

ডা. ছাবিকুন নাহার, ( এমবিবিএস, বিসিএস, এফসিপিএস) প্রসূতি, স্ত্রী ও গাইনীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ( ঢাকা মেডিকেল কলেজ)