ওজন কমানোর জন্য যা যা করার সবই করছেন। কিন্তু ওজন মাপার যন্ত্রের কাঁটাটা আগের ঘরেই আছে? হতাশ হবেন না। আপনি হয়তো ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাধারণ ভুলগুলো করেই যাচ্ছেন। আসুন জেনে নিই সেই ভুলগুলো।
ভুল ১
ওজন কমানোর জন্য পছন্দের খাবারগুলো বাদ দিচ্ছেন?
ডায়েট করার সময় অনেকেই নিজের পছন্দের খাবারগুলো একেবারেই বাদ দেয়।এটি করলে ওই খাবারগুলো আরো বেশি খেতে ইচ্ছে করে। একপর্যায়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে বেশি করে তা খেয়ে ফেলে। তখন আফসোস থেকে আবার ফিরে যায় কড়া ডায়েটে। পছন্দের খাবার বাদ দেয়া এবং বেশি করে খাওয়া এই চক্র চলতেই থাকে। আপনি নিজেকে এভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে ব্যর্থতার দিকেই এগুবেন। ডায়েটের ক্ষেত্রে কোনো খাবারই নিষিদ্ধ থাকা উচিত নয়। কেবল বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত। পছন্দের খাবার একেবারে বাদ দিয়ে ওজন কমানো যায় না। বরং নিয়মিত ডায়েটের পুরস্কার হিসেবে থাকা উচিত মাঝেমধ্যে অল্প পরিমাণে পছন্দের খাাবার। ধরুন, আপনি চকলেট কেক খেতে পছন্দ করেন, তাহলে সপ্তাহে একদিন অল্প পরিমাণে খান। নিয়মিত খেলে আপনার একসাথে অনেক খাওয়ার ইচ্ছে জাগবে না। কিছু কিছু ডায়েটে কিন্তু কোনো একটা নির্দিষ্ট দিন পছন্দের খাবার খাওয়ার অনুমতি থাকে। সেদিনটির অপেক্ষায় অন্যান্য দিন ঠিকমতো ডায়েট মেনে চলে সবাই। দিনটি জানা থাকলে অন্যান্য দিন পছন্দের খাবার খাওয়ার ইচ্ছাটিও উবে যাবে। আপনার ডায়েট প্রক্রিয়ায় যদি তা না থাকে তবে এখনই একটা দিন যোগ করে নিন, যেদিন আপনি অল্প পরিমাণে আপনার পছন্দের খাবার খাবেন।
ভুল ২
সালাদে ৩০০ ক্যালোরির বেশি থাকে না?
ডায়েটের অন্যতম খাবার সালাদকেই অনেকেই আদর্শ মনে করেন। সালাদেও কিন্তু উচ্চ ক্যালোরির উপাদান থাকতে পারে। অনেকেই সালাদের ভেতর লুকিয়ে থাকা ফ্যাটের কথা ভুলে যায়। সালাদ খাওয়ার সময় অন্যান্য উপাদান বা ড্রেসিংয়ের কথা মাথায় থাকে না। সালাদেও সবজির সাথে মাখানো থাকতে পারে মাখন বা তেল। তাই সালাদ খাওয়ার সময় এর উপাদান বা পরিমাণ সম্পর্কে জেনে নিন। খাওয়ার সময় নিজেই সালাদের ড্রেসিং বেছে নিন। তাতে আপনি জানবেন কেমন ক্যালোরি আপনি নিচ্ছেন। বাইরে কোথাও সালাদের ফরমায়েশ দিলে ড্রেসিংটাকে আলাদা দিতে বলুন। ড্রেসিং ছাড়া সালাদের ডিশ খাওয়ার অভ্যাসটা আরো ভালো।
ভুল ৩
ব্যায়ামের পুরস্কার হিসেবে পছন্দের খাবার?
ব্যায়াম করার সময় কতটা ক্যালোরি খরচ হলো তা জানা কঠিন। ক্যালোরি খরচের নিয়ামক অনেক। যেমন, কতটুকু পরিশ্রম করছেন, কতটুকু হাঁপিয়েছেন, শরীরের অবস্থা কী, আবহাওয়া কেমন ছিল ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। ব্যায়ামের বিভিন্ন যন্ত্রে ক্যালোরি খরচের যে হিসেব দেখায় তা অনেক সময় বাড়িয়ে বলা হয়। আর ক্যালোরি খরচ করা যত কঠিন তা গ্রহণ করা কিন্তু তত সহজ। এই যেমন, বেশির ভাগ ক্যান্ডিবার ৩০০ ক্যালোরির। অথচ এটা মাত্র কয়েক মিনিটেই খাওয়া যায়। তাই ওজন কমাতে শুধু ব্যায়াম করলেই হবেনা। ক্যালোরি গ্রহণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এক ঘণ্টা হেঁটে এসে অনেক ক্যালোরি খরচ হয়েছে ভেবে আইসক্রিম দিয়ে নিজেকে পুরস্কৃত করবেন না। ব্যায়ামের পর অবশ্যই আপনার খাওয়া দরকার। কিন্তু তা হওয়া উচিত হাই ফাইবার কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনযুক্ত। আর কতটুকু ক্যালোরি খরচ হলো তা হিসেব না করে বেশি বেশি ব্যায়াম করতে হবে। যদি হাঁটেন তবে দ্রুত ও বেশি সময় ধরে হাঁটতে হবে। ব্যায়াম এবং খাবার বেছে খাওয়া একসঙ্গে চললেই কেবল ওজন কমবে।
ভুল ৪
বাসায় রান্না করে না খাওয়া
ঘরের বাইরে বেশি খেলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়। আপনি হয়তো ভাবছেন, রেস্তোরাঁয় তো স্বাস্থ্যকর খাবারই খাচ্ছেন। কিন্তু তা কাজে আসে না। কারণ বাইরের খাবারের তুলনায় ঘরে খাওয়ার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকে। প্রথম কথা, রেস্তোরাঁয় প্লেটে খাবার বেশি দেয়া হয়। আপনার ডায়েটের জন্য কম খাবার দিয়ে তো তারা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে চাইবে না। তবে রেস্তোরাঁয় গিয়েও কম খাওয়ার কৌশল আছে। অ্যাপেটাইজার ও পরে মূল খাবারের অর্ডার না দিয়ে বরং দুটো অ্যাপেটাইজার দিন। অথবা মেইন কোর্সটা আপনি একা না খেয়ে আরেকজনের সঙ্গে ভাগ করে নিন। আরেকটা সমস্যা হলো, ক্ষুধার্ত হয়ে রেস্তোরাঁয় যাওয়া। তাই রেস্তোরাঁয় যাবার আগে হালকা কিছু খেয়ে যাওয়াই ভালো। এই যেমন কয়েক টুকরা ফল। আপনি যখন ক্ষুধার্ত থাকবেন না তখন আপনি ক্যালোরির হিসেব করে খাবার অর্ডার দিতে পারবেন। ক্ষুধা বেশি থাকলে মাথা কাজ করবে না। এসব ঝামেলা এড়াতে বাসায় রান্না করেই খাওয়াই ভালো।
ভুল ৫
আপনি মনে করছেন আপনি তো বন্ধুদের চেয়ে কমই খাচ্ছেন কোনো কোনো সময় কি মনে হয়, আপনি ডায়েট করে বা কম খেয়েও মোটা হচ্ছেন আর আপনার বন্ধুরা বার্গার-পেস্ট্রি খেয়েও দিব্যি পাতলা আছে? কিন্তু আসলেই কি আপনি অন্যদের চেয়ে কম খাচ্ছেন? হয়তো আপনি যা খাচ্ছেন সেগুলোর মোট ক্যালোরি আপনি যা ভাবছেন তার তুলনায় বেশি। স্বাস্থ্যকর খাবারেও কিন্তু ক্যালোরি থাকে। তা হিসেব থেকে বাদ দেবেন না। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর খাবারটি যদি আপনি বেশি করে খান। আমিষ জাতীয় খাবারের চেয়ে শর্করাজাতীয় খাবারে ক্যালোরি বেশি থাকে। আমিষ থেকে আসা ক্যালোরি খরচ না হলে তা পেশিতে পরিণত হয় আর শর্করা থেকে আসা অব্যবহৃত ক্যালোরি পরিণত হয় সুগারে। তাই খাবারের উপাদানের কথাও মাথায় রাখা উচিত। আর যারা ডায়েট করেন তাদের বেশির ভাগই খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন নন। এজন্য এক কাপ ভাত খাওয়ার কথা থাকলে কাপ দিয়ে মেপে ঠিক এক কাপই নিন। চোখের আন্দাজে নিতে যাবেন না। আর খাওয়ার পর খাতা কলম নিয়ে হিসেব করে দেখুন তো আপনি কতটুকু খেলেন। বেশির ভাগ মানুষই এ হিসেবটি করে দেখেছে, তারা যতটুকু ভেবেছে, খেয়েছে তার চেয়ে বেশি। আর একটি কথা, খাওয়ার আগে আপনার প্লেটে যেন এক-চতুর্থাংশ প্রোটিন, এক-চতুর্থাংশ শর্করা এবং বাকি অর্ধেক সবজি দিয়ে ভরা হয়। আবার প্লেটের আকারও ছোট করতে হবে।
[বেটার হোমস অ্যান্ড গার্ডেনস অবলম্বনে]
ছবি: ইন্টারনেট
রোকেয়ানামা ডেস্ক