0

অন্তর্দ্বন্দ্ব

Share

সবেমাত্র ক্লাস নাইনে পড়ি। কতোই বা বয়স হবে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মা সহ ছয় ভাই-বোনের সংসার। বাবা বেঁচে নেই। তিনবেলা খাবারই জুটেনা ঠিকমতো। এর মধ্যেই বিয়ের প্রস্তাব এলো। বয়সে তিনি আমার বাবার বয়সী, শিক্ষিত এবং বড় চাকরিজীবী। তার পাঁচ সন্তানের সবার ছোটটাই আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। উনার স্ত্রী অসুস্থ, তাই আরেকটা বিয়ে করতে চান। তবে আমাকে তার বাসায় নেয়া হবেনা, আলাদা বাসায় রাখা হবে। তার সাথে বিয়ে হলে আমার পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রচন্ড মেধাবী এই আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নিবেন তিনি। না করে দিব সেই শক্তি আমার ছিলনা। সাথে ছিল পড়াশোনা চালিয়ে যাবার লোভ। নয়তো বা পড়াশোনাটাই বন্ধ হয়ে যাবে আমার।

তারপর একদিন বিয়ে হয়ে গেল তার সাথে। বাবার বয়সী একজন বরকে ঘিরে আমার ভবিষ্যত। একদিকে প্রচন্ড ঘৃণায় তার দিকে চোখ রাখতাম, অন্যদিকে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসতো মাঝে মাঝে। পরম স্নেহে এই আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়া এবং একটার পর একটা ভাল রেজাল্ট, ভাল জায়গায় পড়ার সুযোগ পুরোটাই তার কল্যাণে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বরাবরই ভাল রেজাল্ট। খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, নিয়েছি উচ্চতর ডিগ্রীও।

আমার নিজের সন্তান নেয়া হয়নি। একজন সাধারন মেয়ে যেরকম সংসার করে বা স্বপ্ন দেখে তেমনটা হয়ত আমার হয়নি কখনও। কিন্তু এই আজকের যে আমি সেটা হতে পারতাম না যদি সেদিন বাবার বয়সী বরটি আমাদের সংসারের হাল না ধরতেন। হয়তো সেই ক্লাস নাইনেই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত আমার।  মাঝে মাঝে অন্তর্দ্বন্দ্ব কাজ করে। সেই মানুষটাকে আমি কি ভাবব? দেবতা নাকি প্রচন্ড লোভী একটা মানুষ..! যিনি কিনা নিজের স্ত্রী অসুস্থ বলে একটি কন্যাসম মেয়েকে বিয়ে করে এনেছিলেন তার কিছু জৈবিক চাহিদা মেটাতে। ভাবতে চাইনা এসব। জীবন পার হয়ে গেছে বেশিরভাগটাই, তবুও কথাগুলো মনে উঁকি দেয় কোন এক নি:সঙ্গ প্রহরে।

চারুলতা ( ছদ্মনাম)