0

ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার কেউ ছিলনা

Share

লাবনী হোসেইন

 এয়ারপোর্টে  সবাই বিদায় দিচ্ছিল আমাকে, সময়টা ছিল ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর। বলা যায়, সদ্য কৈশোর থেকে তারুন্যে পা রাখার সেই বয়সটায়। বুকে চাপা চাপা কষ্ট! মানুষ বলে, অতি শোকে পাথর। আমার অবস্থাও ঠিক তেমনই ছিল। আর মনে হচ্ছিল সবাই যেন আমাকে সমাধি করতে এসেছে। আসলে কি তাই ছিল? যাই হোক,  প্রবেশ করলাম কানাডার মন্ট্রিয়াল শহরে। সুস্বাগত হলাম ফুলের তোড়া সহকারে ভাল মতোন। শুরু হলো স্বামীর সাথে নতুন জীবন। তখন কে জানতো আমার সামনের জীবনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ এক যুদ্ধক্ষেত্র! সামনে যুদ্ধের ময়দান অথচ আমার তা অজানা।

প্রথম দুই মাস বেশ ভালমতোই কেটেছিল।  তারপর শুরু হলো আমার সাথে  হিংসামূলক আচরণ, যা এখনও আমার জীবনে বহমান। মন্ট্রিয়াল শহরটাকে তখন খুব অজানা এক গ্রহ বলে মনে হতো। মাঝে মাঝে অবশ্য খুব উপভোগও করতাম এই শহরের সৌন্দর্য। মনে হতো, আরে একি কান্ড!  এ যে দেখছি এক ভীন গ্রহ। যেন চাঁদের সাথে সম্পৃক্ত কোন এক শহরে সাদা বরফে আলোর ছটা, দেখতে বেশ লাগতো। 

এখনও আমি এই শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করি। কিন্তু এই সৌন্দর্যের মাঝেও যে ভয়ানক রূপ থাকে তা আমার চাইতে বেশি কে জানে! আমি আমার চলার পথে শিখেছি, জেনেছি কঠিন বাস্তবতা। নিজস্ব অভিজ্ঞতা মানুষকে অনেক কিছু শেখায়,  যে জ্ঞান  আমরা বই পড়ে  বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাবনা কখনই। 

যাই হোক, আসল কথায় আসি। প্রথম প্রথম ভাল লাগলেও কিছুদিন পর থেকেই খুব নি:সঙ্গ লাগতে শুরু করল। আমার একাকীত্ব সময়ের শুরুটা হতো সকাল ছয়টার আর শেষ সন্ধ্যা ছয়টায়। সারাদিন কোথাও কেউ নেই এমন অবস্থা । চারপাশে চুপচাপ, টু শব্দটুকুও নেই কোথাও। ইন্টারনেট কেন্দ্রিক জীবন তখন ছিল না। ছিল না কোন টিভি চ্যানেল বা কোনো সেলফোনও। কেবলই মনে হতো, কোথাও কেউ নেই, চারপাশে কেবলই শূন্যতা! আস্তে আস্তে নি:সঙ্গতা যেন আমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরতে শুরু করলো। 

দেশ থেকে ফোন আসলে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে বুকফাটা কান্না আর দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। যা আবার ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটিকে বুঝতে দেয়া যাবেনা কিছুতেই।  এমন অবস্থায় কেউ একজন ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার ছিল না। এই দেখো, লিখতে-লিখতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।  আপনজন সবাইকে মিস করতে শুরু করলাম…।

  লাবনী হোসেইন, মন্ট্রিয়াল, কানাডা থেকে