0

সম্পাদকীয়

Share

ফারাহ জাবিন শাম্মী

মহামারীর একটা কালো অধ্যায় আমাদের জীবন থেকে দু-দুটো বছর কেঁড়ে নিয়েছে। শুধুই কি সময়! চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে অনেক বন্ধু, স্বজন এবং প্রতিবেশীও। কেউ হারিয়েছেন চাকরি, কেউ বা ব্যবসায়িক ক্ষতি পোষাতে না পেরে হয়েছেন সর্বশান্ত। শহরের পাঠ চুকিয়ে  অনেক পরিবার ফিরে গেছে আপন নীড়ে। প্রত্যাশা, নতুন করে হোক  শুরু সবকিছু। স্কুল আঙিনায় দৌড়ে বেড়ানো শিশুটিও ঘরবন্দি। স্বাভাবিক সামাজিকীকরণ না হওয়ায় বাধাগ্রস্ত শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ। শহুরে শিশুরা ‘না হওয়ার চাইতে কিছুটা ভালো অনলাইন ক্লাস’ পেলেও এই সময়টায় গ্রামাঞ্চলের শিশুরা হয়েছে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাটাও বেশ বড়। 

হয়তো প্রতিটি সংকটের মাঝেই একটা সম্ভাবনার বীজ বপন করা থাকে। পাতায় পাতায় বিষন্নতা,দীর্ঘশ্বাস ফেলার জায়গা নেই, গাছেরও মন কেমন করে। এমন অবস্থায় জীর্ণ খোলস ফেলে যৌবনের রঙে সেজে  ওঠে প্রকৃতি… ঠিক মহামারীর টালমাটাল অবস্থায় যখন ঘরবন্দি জীবন আমাদের। নীল আকাশ, সবুজ গাছের পাতারা, নির্মল বাতাসে পাখিদের কিচিমিচির আনাগোনায় ভিন্ন এক পরিবেশ! মানুষের চলাচলে বাধাগ্রস্ত প্রকৃতি যেন আপন ছন্দে ফেরায় চেষ্টায় তখন।

প্রকৃতির এমন শিক্ষা নিয়ামক হিসেবে আমাদেরকেও অনুপ্রাণিত করে। সময় বদলায়, সামনে এগোয়। আসলে পরিবর্তনই তো জীবন আর স্থবিরতা মানেই মৃত্যু। মহামারির ধাক্কা কিছুটা সামলে ওঠে আটঘাট বেঁধে নিজেকে বদলে নেবার প্রচেষ্টায় পুরো পৃথিবী। বদলে যাওয়ার প্রচেষ্টায় আমরাও কিছুটা  শামিল হতে চাইলাম। প্রিয় পাঠক, মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি একটু দেরিতেই আপনাদের সামনে হাজির হওয়ার জন্য। বলতে পারেন, নিজেকে খানিকটা গুছিয়ে নিচ্ছিলাম, সেই সাথে চুপিচুপি একেবারেই আনকোরা এ যাত্রায় রোকেয়ানামার পাঠক প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। 

তবে এরই মধ্যে আপনারা নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, রোকেয়ানামার উদ্দেশ্য সম্পর্কে। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন,আয়োজনটি নারীদের নিয়েই। নারীরা আজ তাদের অদম্য পথ চলাতে খিড়কীর দুয়ার খুলে আঁধারের কোণঠাসা গন্ডি পেরিয়ে প্রবেশ করেছে তেজোময়ী সূর্যের জ্যোতি, জোছনার রূপালি আলোয়। ভাবনার আড়াল থেকে কারো নিপুণ হাতের ইশারায় জীবনের পাণ্ডুলিপি ভরেছে নতুন নতুন গল্প- কবিতাতে। আমাদের আঙিনায় আজ আলোর উৎসব। আলোর সবকটা ধাপে পা রেখে নারীরা আলোকিত করেছে নিজেকে, দেশকে। 

তবে রোকেয়ানামা কেবল নারীর ঝা চকচকে দিনগুলোতেই নয়, লুক দিতে চেয়েছে অনালোকিত অনেক বিষয়েও। এখনও আমাদের দেশের নারীদের পায়ে পায়ে পাথর ছড়ানো। তাঁদের অনেকেই প্রতিদিন নিজেদের ইচ্ছেগুলোকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে বঞ্চিত করছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনি অসংখ্য বিষয়ে মুখ খুলবো আমরা। আর এ যাত্রায় সঙ্গী হিসেবে চাই আপনাকেই। যদিও প্রযুক্তির কল্যাণে আর হেকটিক নাগরিক জীবনে আমাদের সম্পর্কগুলো কেবল আর কলমের নস্টালজিক আখরে আবদ্ধ নেই। অতিমারি এসে যেন সে সত্যকে আরো খানেকটা বুঝিয়ে দিয়েছে। ক্যাফেতে ঢুকে অর্ডার দিয়েই মুখোমুখি বন্ধুটির সাথে আলাপচারিতা শুরুর আগেই আমরা এখন অভ্যস্থ চেক-ইন দিতে। অবশ্য বন্ধুটিও তাতে ট্যাগড হয়। বাঁচোয়া। 

বই, চিত্রকলা, লাল চা আর দুটো টোস্ট খেতে খেতে সামাজিক ন্যায় নিয়ে, তত্ত্ব নিয়ে, প্রিয় লেখকের নতুন লেখা নিয়ে এখন আর আড্ডা দেবার সময় কোথায়! বইমেলার মাস জুড়েই নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে আর জ্যাম উজিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় বছরের সেরা বইগুলোর কাছে। কিন্তু আমদের আর পড়ার সময় কোথায়! নিজের শিশুটিকেও বইয়ের বদলে আসক্তি করছি বোকাবাক্স আর প্রযুক্তির ছড়ানো গেমসগুলোতে। নিজের, প্রিয় মানুষগুলোর, পরিবারের আর সকলের জীবন নিয়ে আজ আমরা বড্ড উন্নাসিক। 

প্রিয় পাঠক, সম্পর্কের সংজ্ঞা, সমীকরণ আর সূত্র বদলে যাবেই। সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তনও আসবে। তারপরও কথা থাকে। আপনার আমার কিছু ইতিবাচক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নারী-পুরুষ সম্পর্কগুলোকে আরো সুন্দর করে তুলতে পারি, ভূমিকা রাখতে পারি একটি সুন্দর সমাজ গঠনে।

ঈদ চলে এসেছে প্রায়। ছুটির এই সময়টাতে প্রিয় সন্তান ও পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কাছে দূরে কোথাও, সবুজের কাছাকাছি। প্রিয় পাঠক, রোকেয়ানামায় আপনাকে স্বাগত। আপনার মূল্যবান ও ইতিবাচক ভূমিকার প্রতীক্ষায় থাকবো আমরা। সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক।