2

কে রাখে ধরে আর কে ছেড়ে যায় হাত

Share

সম্পাদকীয়

চোখটা বুজে খানেক সময় অনুভব করার চেষ্টা করুন তো? এক ভরা পূর্ণিমায় আপনার ঘরের জানালা অথবা বারান্দার গ্রিলের ফাঁক গলে চাঁদের পূর্ণ আলো কয়েকটা গাছের ছায়া মাড়িয়ে আপনার ঘর বা বারান্দায় উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। আলো-ছায়ার এমন মায়াবী পরিবেশে আমাদের মন নেচে ওঠে না তখন? শান্তি শান্তি একটা অনুভব আমাদের শিহরিত করে। আমরা প্রাণভরে উপভোগ করি তা, আলোয় আলোয় মাখিয়ে নেই নিজেকে। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নিজেকে পৃথিবীর একজন সুখী মানুষ বলে মনে হয়। তেমনি দিনের প্রথম আলো, টকটকে লাল ডুবতে থাকা সূর্য, পাহাড়, সমুদ্রের গর্জন এমনকি পথের চিকচিক করা বালিও আমাদের মনে সুখ এনে দেয় কখনো-সখনো। পরিবার, বন্ধু, সামাজিক বন্ধন এমন অনেক কিছুর মায়ায় ঘেরা একেকটি মানুষের জীবন। তবে জীবন তো সবসময় একই চাকায় ঘোরে না। পরিবার অথবা সমাজে চলতে গিয়ে কখনো দেখা মেলে কর্দমাক্ত উঁচু-নীচু পথের আবার কখনও মসৃন, সুন্দর পথে এগিয়ে চলি আমরা। প্রকৃতির নিয়মেই সুখ এবং দু:খ পাশাপাশি হাঁটে। এটাই মানুষের জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম। এ তো গেলো মুদ্রার এক পিঠের গল্প। মুদ্রার অপর পিঠেরও কথা আছে। যেখানে লেখা  রয়েছে একেকটা মানুষের ভেতরের বেদনার আখ্যান। স্বাভাবিক জীবনের  নিয়মকে ছাড়িয়ে গিয়ে কিছু মানুষের  জীবন হয়ে উঠতে পারে  ছন্দহীন। ব্যর্থতা, স্নেহ, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে কারো কারো জীবনে নেমে আসে বিষণ্নতার কালো মেঘ। আর তা জমে জমে যখন পাহাড়সম হয়ে ওঠে তখন জীবন নামের বোঝাটাকে বড্ড বেশি ভারী মনে হয়। সেই বোঝা টানতে টানতে  ক্লান্ত পথিক জীবনটাকে উড়িয়ে দিয়েই মুক্তির স্বাদ খোঁজেন। জীবনের  কাছে হেরে যাওয়ার  এই কঠিন সিদ্ধান্তটা একজন মানুষ তখনি নেয় যখন সুখের আশায় আঁকড়ে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও হারিয়ে ফেলে। মানুষ পরাজিত হয় ভালোবাসার কাছে, মানুষ পরাজিত হয় স্নেহের কাছে, সমাজের তৈরি করা নানা নিয়ম-অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার কাছে। 

অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন পরিচিতরা, ভক্তরা। ‘আত্মহত্যা কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নয়’- এমন ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যাচ্ছে অনেককেই। কেউ কেউ আফসোস করছেন – কেন হিমুর খবরাখবর রাখতে পারেননি। আগে যদি জানতেন এমন সিদ্ধান্ত নেবে মেয়েটা তাহলে হয়ত তাকে ফেরানোর চেষ্টা করতেন। কেউবা  বলছেন, অনলাইনে জুয়া খেলার ‘বিগো লাইভ’ একটি অ্যাপের মাধ্যমে প্রচুর টাকা-পয়সা খুইয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন, তাঁর জীবন একটু অন্যরকম অগোছালো ছিল। মায়ের মৃত্যুর পর আরো একা হয়ে পড়েছিলেন হিমু, বন্ধুর সাথে চলছিল মনোমালিন্য, সবকিছু মিলিয়ে মানসিক অশান্তিতে আত্মহত্যা করেছেন। এরকম অনেক কথাই চলে এসেছে। যদিও ঘটনাটি ‘আত্মহত্যা’ এখনো প্রমাণিত নয় তবুও এখন পর্যন্ত এটাই প্রতিষ্ঠিত ।

 ২০২০ সালে করোনা অতিমারি আসার পর যমে- মানুষে টানাটানিতে থমকে যায় স্বাভাবিক পৃথিবীটা। আর সে লড়াইয়ে জিততে ঘরবন্দি পুরো পৃথিবীর মানুষ। লকডাউনের মধ্যেই একদিন আচমকা খবর আসে, বলিউডের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেছেন। টাকা কিংবা জনপ্রিয়তা কোনটারই অভাব ছিল না সুশান্তর। তবুও তিনি জীবন থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন। এই ঘটনাগুলো আমাদের ভেতরে নানা প্রশ্ন জন্ম দেয়। প্রশ্ন আসে, মানুষ কেন কোন পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়? এই মৃত্যুগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এই হেরে যাওয়ার প্রতিটি গল্পের পেছনে থাকে অন্য একজন ‘মানুষ।’ মানুষ হেরে যায় অন্য একজন মানুষের স্নেহের কাছে, ভালোবাসার অভাবে। আঁকড়ে ধরে থাকার মতো একটি শক্ত হাত পেলে মানুষ তার সকল কষ্টকে ধারণ করেও বেঁচে থাকতে পারে। সেটা হতে পারে স্নেহ দিয়ে, হতে পারে ভালোবাসা দিয়ে, হতে পারে মাথা শক্ত রেখে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে। কিন্তু এখানেই মানুষ প্রকৃত অসহায়। বাকি কারণগুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করে কেবল। 

পরীক্ষায় কাঙ্খিত রেজাল্ট না পেয়ে আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। তেমনি প্রত্যাশিত চাকরি, প্রিয় মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা থেকে সৃষ্ট হতাশার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। সোজাসাপটাভাবে আত্মহত্যার দায় আমরা সেই ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে গেলেও এই সমাজ, কাছের মানুষজন কি পরোক্ষভাবে এর জন্য দায়ী নয়? খারাপ রেজাল্টের কারণে পরিবার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বকাঝকা, সমাজের মানুষের কথার আঘাত, চাকরির জন্য পরিবারের চাপ বা ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েও অনেকে হাঁটেন এই পথে। এক এক করে মানুষগুলো চলে যাচ্ছে কেবল অন্য একজন মানুষের অভাবে। চলে যাওয়ার আগে কেউ টের পাচ্ছে না। চলে যাওয়ার পর আমাদের কষ্ট হচ্ছে, মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। কেবল ভাল রাখার দায়িত্বটুকু নিতে আমরা ভুলে যাচ্ছি সবাই। দিনকে দিন আমাদের অনুভূতিগুলো যেন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। বড্ড বেশি স্বার্থযুক্ত একটা  সময় পার করছি আমরা এখন।

 “আত্মহত্যা কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।” এটুকু বলে দায় এড়াতে চান যারা তাদের বলছি, আপনার কি মনে হয় যে মানুষটি এরই মধ্যে আত্মহত্যা করে ফেলেছেন  সেই মানুষটির এই সত্যিটা অনুভব করার মতো বোধটুকু থাকে? সমাজের একজন হিসেবে ‘আমাদেরও কিছু করার আছে’ এইটুকুন অস্বীকার করার উপায় তো নেই। একজন ব্যক্তির আত্মহত্যার পেছনে একটি কারণকে আমরা চিহ্নিত করলেও এর পেছনে আরো অনেক কারণ থাকে। কারো কটু কথা, কারো খোঁচা দেয়া কথা, অসম্মানিত হওয়া এ সকল কিছুই পরোক্ষ ভূমিকা রাখে। চাকরি হারিয়ে বা না পেয়ে যে বন্ধু বা স্বজনটি মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছে তার খবর কতজন রাখি আমরা? একটু ভেবে বলুন তো, আপনার সামনে যদি কারো চোখ ছলছল করে ওঠে থাকে কখনো, তবে তাঁর ভেতরের যন্ত্রণাটুকু ভাগ করে নেওয়ার কোন চেষ্টা করেছেন কি না, নাকি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছেন? কোন জায়গায় পরিচিত কারো কয়েকটা দিনের অনুপস্থিতি কি আপনাকে ভাবিয়ে তুলেছে কখনো বা খোঁজ নিয়েছেন? নাকি একজন বন্ধু বা কাছের কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আপনার সাথে তা শেয়ার করার পর এই সময়ে উপদেশ তাঁর কোন কাজে আসবেনা জেনেও আপনি উপদেশই দিয়ে গেছেন? কিন্তু তাঁর তখন দরকার একটু বেশি কিছু। আপনি যদি সে সময় বুঝতেই না পারেন, সে কেন আপনাকে তা শেয়ার করেছে তবে আপনি নিজের দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন কেবল! এমন পরিস্থিতিতে তাঁর দরকার ছিল একটুখানি ভরসা, একটুখানি সাহস যোগানো এবং পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দেওয়া। উপদেশ তো আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় হরহামেশাই মেলে! তাই বেঁচে থাকতে যদি হাতটা বাড়িয়ে দিতে না পারেন তাহলে মৃত্যুর পর আপনার এ জাতীয় দায়িত্বহীন কথা চলে যাওয়া মানুষটির এবং পরবর্তীতে যারা এমন সিদ্ধান্তে যাবেন তাঁদের কোন কাজে আসবে না। কখন আমাদের উপদেশ এবং কখন আমাদের শক্ত করে হাতটা ধরে রাখতে হবে সেই অনুভূতিটুকু আপনার-আমার সর্বোপরি আমাদের সবার মাঝেও তৈরি হোক।   

প্রযুক্তি আমাদের সবকিছু সহজ করে দিলেও মানবিক বোধ, সম্পর্কের শূন্যতা তৈরিতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে। আমাদের নির্মল পারিবারিক, সামাজিক বন্ধনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বই নিয়ে, গ্রামসির তত্ত্ব, রাজনীতি নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলা প্রাণখোলা আড্ডার  জায়গা নিয়ে  নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার চকচকে স্ক্রিন। ভালোবাসা, কেয়ার, স্যাড, প্রাণখোলা হাসি যেন আটকে গেছে রঙিন ইমোজিতে। ফিল্টার দিয়ে ছেঁকে ছেঁকে পোস্ট করা ছবির মতোই আমাদের বাইরের আবরণটা বড্ড বেশি ঘষামাজা করা। ভেতরে ভেতরে কেবলই শূন্যতার গল্প, হেরে যাওয়া আর হারানোর গল্প। আর সে গল্প বাস্তব হয়ে ধরা দেয় যখন জীবন নামক কঠিন বোঝাটাকে কেউ থামিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়। লাগামহীন, ছন্দহীন জীবনটাকে উড়িয়ে দিয়েই যেন মেলে মুক্তির স্বাদ। তবুও বার বার বলতে হয় ‘জীবন অনেক বেশি সুন্দর।’ এই সুন্দর জীবনটা আরো সুন্দর করে তুলতে পারে মানুষের একে-অপরের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা, মানবিকতা। শত ব্যস্ততার মাঝেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত স্বজন, বন্ধু বা কাছের মানুষটিকে দিনে বা সপ্তাহে একটিবার বলা- ‘হ্যালো’। 

একজন মানুষের মানসিক ভিত তৈরি হয় শিশুবয়সেই। যে পরিবারের শিশুরা আদর-ভালোবাসায় বেড়ে  ওঠে তাদের মানসিক শক্তি, সামনের পৃথিবীর কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা  করার শক্তি অনেক বেশি থাকে। আর যেসব শিশুরা পারিবারিক অশান্তি, পরিবার, স্কুল  ও সামাজিক পরিসরে বুলিং, বডিশেমিংয়ের শিকার হয় তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, সহ্য করার ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে কম হয়, যা পরবর্তী জীবনে মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা হয়ে  ওঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।  

তারপরেও হেরে যাওয়া নয়। নিজের ইচ্ছেশক্তির মাধ্যমে সবকিছুই পরাজিত করা সম্ভব। এমন উদাহরণও আছে অনেক। কারো মাথায় যখন প্রথমেই এমন কোন প্রশ্ন আসে – “এ জীবনের প্রয়োজন নেই।”  একটু পরেই সে হয়ত ভাবতে পারে “কি সব ভাবছি আবোল-তাবোল”। কিন্তু এইরকম চিন্তা ভুল করেও যদি কারো মাথায় আসে তখনি নিজেকে নিয়ে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। এমন মুহূর্তে ব্যক্তির নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও থাকে। পুরো পৃথিবীর মানুষ  হয়তো আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু সুন্দর এই পৃথিবী তো নয়…!!! যদি সবাই ছেড়ে চলে যায় তবুও আপনার চারপাশে অসংখ্য নিয়ামক রয়েছে যারা আপনাকে অকৃত্রিম ভালোবাসা দিতে সদা প্রস্তুত। 

ঠিক তখন প্রথমেই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে- ‘কে কি বলবে’, ‘কে কি ভাববে’ সেই বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, এইসকল মানুষদের কেউই আপনার কষ্ট নিজের করে নিতে রাজি নয়। আপনি তখন কেবল নিজের জন্য ভাববেন, প্রয়োজনে খুব স্বার্থপর (ইতিবাচক) হয়ে যাবেন। কেউ পাশে নেই ? একাই চলে যান  সমুদ্রের কাছে। জোয়ারে একেকটা ঢেউ  আছড়ে পড়বে আর আপনার ভেতরের ক্ষতগুলোকে শুষে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ভাটার টানে। আপনি পাহাড়ে যান। পাহাড় আপনাকে আরো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখাবে। একাকীত্বও যে কতটা সুন্দর হতে পারে তা আপনি শিখবেন পাহাড়ের কাছে। কোথাও যেতে পারছেন না?  ঘর থেকে দুই পা নিয়ে বেরিয়ে যান সবুজ মাঠে অথবা বাসার ছাদে। সবুজ গাছপালা থেকে প্রাণভরে নি:শ্বাস নিতে নিতে আপনি টের পাবেন, ভেতরের ক্ষত সারানোর দারুন টোটকা হিসেবে কাজ করছে এটা। বই পড়া, সিনেমা দেখায় মন না বসলে গান শুনুন প্রাণভরে। মাঝে মাঝে গানও জীবনের সেরা সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন। প্রতিদিন ঘন্টাখানেক সময় শারীরিক ফিটনেসে মনোযোগ দিন। মেডিটেশন বা ধ্যানের উপকারিতা অনেক কিন্তু বিপর্যস্ত মানসিকতায় এই শব্দগুলো যন্ত্রণার মনে হতে পারে। সবচাইতে ভাল উপায় নিজ নিজ ধর্মীয় প্রার্থনায় মনোযোগী হোন। সক্ষমতা থাকলে কিছু টাকা খরচ করে হলেও ভাল একটা জিমে চলে যান। সময় বাঁচানো বা আলসেমি করে বাসার কাছের কোন জিমে না গিয়ে ভাল প্রশিক্ষক আছে এমন কোন জিম বেছে নিন। জিমের উপযু্ক্ত পোশাক পরে যাবেন। নিজের মানসিকতার সাথে মিলে যায় এমন সদস্যদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুন।  কিছুদিন পর আপনি নিজেই টের পাবেন আপনার মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন। শরীরচর্চায় মস্তিষ্কের সিন্যাপসের সংখ্যা বাড়ে। এর ফলে মগজে নতুন কোষ তৈরি হয়। এতে দেহের পেশির সাথে সাথে মস্তিষ্কেরও আকার বাড়ে। আর এটা আপনার মানসিক শক্তিও মজবুত করবে।  

এতটুকু যদি নিজেই করে ফেলতে পারেন তবে নিশ্চিত আপনার জীবনে এমন কিছু করার চিন্তা আর মাথাতেও আসবেনা। এরপর থেকে যায় আরো কিছুটা। আপনি চলে যেতে পারেন কাউন্সেলিংয়ে। এ জন্য কোন মনোবিজ্ঞানীর সাথে কথা বলুন। এটুকু দায়িত্বও নিজেকেই নিতে হবে। আর মনোবিজ্ঞানীদের জন্য বলব, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিজেদের একটুখানি সহজ করে দিন, হাত বাড়িয়ে দিন। এখনও অনেক মানুষ জানেই না কোথায়, কীভাবে কোন মনোবিজ্ঞানীদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

  দিনের পর দিন আপনি কাউকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, অনুরোধ করেছেন, কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন, অসহায়বোধ করেছেন – কেউ ফিরেও তাকায়নি, কেউ আমলে নেয়নি। তাই মানসিকভাবে যখন  কিছুটা ফিট হয়ে যাবেন তখন নিজের যা ভাল লাগবে তাই করবেন ( অবশ্যই অন্যের ক্ষতি করে নয়)। ইতিবাচক স্বার্থপর হবেন। গতানুগতিতা থেকে বের হয়ে নিজের মাঝে কিছুটা পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করুন। বয়স যা-ই হোক না কেন সাজগোজ করুন, সবসময় পরিপাটি থাকার চেষ্টা করুন। অনেকেই টিপ্পনী কাটতে পারে, থোড়াই কেয়ার করবেন তাদের। মাঝে মাঝে একাই চলে যান সুন্দর সময় কাটানো যায় এমন কোন কফিশপে। হালকা মিউজিকের সাথে কফি অথবা চায়ের মগে চুমুক দিতে দিতে নিজেই নিজেকে একদিন বলবেন –  “কি আসে যায় কে রাখে ধরে আর কে ছেড়ে যায় হাত।”